• কবিতা সুর্মা


    কবি কবিতা আর কবিতার কাজল-লতা জুড়ে যে আলো-অন্ধকার তার নিজস্ব পুনর্লিখন।


    সম্পাদনায় - উমাপদ কর
  • সাক্ষাৎকার


    এই বিভাগে পাবেন এক বা একাধিক কবির সাক্ষাৎকার। নিয়েছেন আরেক কবি, বা কবিতার মগ্ন পাঠক। বাঁধাগতের বাইরে কিছু কথাবার্তা, যা চিন্তাভাবনার দিগন্তকে ফুটো করে দিতে চায়।


    সম্পাদনায়ঃ মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়
  • গল্পনা


    গল্প নয়। গল্পের সংজ্ঞাকে প্রশ্ন করতে চায় এই বিভাগ। প্রতিটি সংখ্যায় আপনারা পাবেন এমন এক পাঠবস্তু, যা প্রচলিতকে থামিয়ে দেয়, এবং নতুনের পথ দেখিয়ে দেয়।


    সম্পাদনায়ঃ অর্ক চট্টোপাধ্যায়
  • হারানো কবিতাগুলো - রমিতের জানালায়


    আমাদের পাঠকরা এই বিভাগটির প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন বারবার। এক নিবিষ্ট খনকের মতো রমিত দে, বাংলা কবিতার বিস্মৃত ও অবহেলিত মণিমুক্তোগুলো ধারাবাহিকভাবে তুলে আনছেন, ও আমাদের গর্বিত করছেন।


    সম্পাদনায় - রমিত দে
  • কবিতা ভাষান


    ভাষা। সে কি কবিতার অন্তরায়, নাকি সহায়? ভাষান্তর। সে কি হয় কবিতার? কবিতা কি ভেসে যায় এক ভাষা থেকে আরেকে? জানতে হলে এই বিভাগটিতে আসতেই হবে আপনাকে।


    সম্পাদনায় - শৌভিক দে সরকার
  • অন্য ভাষার কবিতা


    আমরা বিশ্বাস করি, একটি ভাষার কবিতা সমৃদ্ধ হয় আরেক ভাষার কবিতায়। আমরা বিশ্বাস করি সৎ ও পরিশ্রমী অনুবাদ পারে আমাদের হীনমন্যতা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরটি সম্পর্কে সজাগ করে দিতে।


    সম্পাদনায় - অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়
  • এ মাসের কবি


    মাসের ব্যাপারটা অজুহাত মাত্র। তারিখ কোনো বিষয়ই নয় এই বিভাগে। আসলে আমরা আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালবাসার কবিকে নিজেদের মনোভাব জানাতে চাই। একটা সংখ্যায় আমরা একজনকে একটু সিংহাসনে বসাতে চাই। আশা করি, কেউ কিছু মনে করবেন না।


    সম্পাদনায় - নীলাব্জ চক্রবর্তী
  • পাঠম্যানিয়ার পেরিস্কোপ


    সমালোচনা সাহিত্য এখন স্তুতি আর নিন্দার আখড়ায় পর্যবসিত। গোষ্ঠীবদ্ধতার চরমতম রূপ সেখানে চোখে পড়ে। গ্রন্থসমালোচনার এই বিভাগটিতে আমরা একটু সততার আশ্বাস পেতে চাই, পেতে চাই খোলা হাওয়ার আমেজ।


    সম্পাদনায় - সব্যসাচী হাজরা
  • দৃশ্যত


    ছবি আর কবিতার ভেদ কি মুছে ফেলতে চান, পাঠক? কিন্তু কেন? ওরা তো আলাদা হয়েই বেশ আছে। কবি কিছু নিচ্ছেন ক্যানভাস থেকে, শিল্পী কিছু নিচ্ছেন অক্ষরমালা থেকে। চক্ষুকর্ণের এই বিনিময়, আহা, শাশ্বত হোক।


    সম্পাদনায় - অমিত বিশ্বাস

Monday, August 31, 2015

সম্পাদকীয়

একজন কবির জীবনে প্রথম কাব্যগ্রন্থ একবারই আসে। প্রথম প্রেম বা প্রথম চুমুর সঙ্গে তার তুলনা করার রোমান্টিকতায় যাচ্ছিনা, কিন্তু, সম্ভবত, ওই বইটি একজন কবির জীবনে অনস্বীকার্য। প্রথম চুমুর কথাই যদি বলেন, ওটা খুব দক্ষতার সঙ্গে খাওয়া যায়না, খেতে নেই, খাওয়া চলেনা, তাহলে চুমুর অভ্যাসের ধারণা ও কলঙ্ক আপনাকে ধরে ফেলবে। প্রথম চুমুতে যদি আপনার দুর্দান্ত নিপুনতা প্রকাশ পায়, চুম্বিত জন ধরে নেবেন, আপনি এর আগেও চুমু খেয়েছেন, আপনি অভ্যস্ত, অথবা, আপনি কোনো ইরোটিক সিনেমার চুমুকে নকল করলেন। প্রেমিক অথবা প্রেমিকা (আপনার রসিয়া পাঠক/ খাঁটি সমালোচক) তখন বরং ত্রস্ত হবেন, সন্দিগ্ধ হবেন আপনার প্রতি। প্রথম বইটিতে খুব দক্ষতার ছাপ যদি থেকেই যায়, আপনি কবি না আপনি পাঠক, সেই প্রশ্ন অনিবার্য। আর, সেই বই যদি আপনার তারুণ্যের হয়, তবে তো কথাই নেই। কোন বয়সে কতটা পথ চলার পর আপনার বই বেরোল, সেটা তো দেখতেই হবে।
রমেন্দ্র কুমার আচার্য চৌধুরীর মতো কৃপণ কবি এখানে উদাহরণ নন। স্বদেশ সেন নন। অনেক বয়সে অনেক ভেবে যারা একটি এমনকি একটিমাত্র বই প্রকাশ করেন, তাঁরা অনেকেই নন।
যাই হোক, প্রথম বইটি আপনি আপনার প্রথম বয়সেই প্রকাশ করলেন, আর আপনার মুক্তি নেইআপনার কিন্তু বিচার করা হবে। আপনি দক্ষ হলে যেমন বিপদ, আনাড়ি হলেও বিপদ। জীবনানন্দ দাশের জীবনে একটা ঝরা পালক ছিল, ওই বইয়ের যাবতীয় নকলনবিশি তাঁকে ক্ষমা করেনি, সারাজীবন সঙ্গ ছাড়েনি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ সঞ্চয়িতা-র ভূমিকা লিখতে গিতে নিজের প্রথম ও প্রথমের দিকের বইগুলোতে বড়োদের আসরে বালকসুলভ চাপল্যের ও স্খলিত চরণের কথা বলেছেন, একটা সন্ধ্যাসঙ্গীত তাঁকেও শেষ অবধি অস্বস্তিতে রেখেছে, রেহাই দেয়নি। ভেবে দেখুন, রবীন্দ্রনাথের ওই অস্বস্তির কারন ছিলনা। এক তরুণের প্রথম কাব্যগ্রন্থের কাছে আমরা যা আশা করি, সন্ধ্যাসঙ্গীত তা আমাদের মিটিয়েছে। ভাগ্যিস একটা ঝরা পালক রবীন্দ্রনাথের জীবনে ছিলনা। প্রথম পর্বে রবীন্দ্রনাথ অনেক খারাপ কবিতা লিখেছেন, সারাজীবনেই বহু খারাপ কবিতা লিখেছেন, অ-কবিতা লিখেছেন, কিন্তু একটাও দক্ষ কবিতা লেখেননি। প্রথম জীবনেই বিহারীলালের প্রভাব ছিল বটে, সারাজীবনই ছিল বৈষ্ণব কবিদের প্রভাব, ব্রিটিশ রোমান্টিকদের আদল, মেটাফিজিকাল কবিদের ছাপ, কিন্তু তাতে তাঁর আন্তর্জাতিক নিজস্বতার কোনো সমস্যা হয়নি। বাংলা কবিতার খাতটিকে অনুকরণের স্পৃহা যে তাঁর নেই, নিছক ভালো কবিতা তিনি লিখতে আসেননি, লিখতে চাননা, পাঠককে অভ্যাসের বাইরে নিয়ে যেতে চান, অপর একটা অভ্যাসের মধ্যে নিজের পাঠককে গড়ে নিতে চান, সেটা সন্ধ্যাসঙ্গীত বুঝিয়ে দিয়েছিল, পায়রা কবির তকমাটাও জুটেছিল তাই।
রবীন্দ্রনাথ যে রিস্কটা নিয়েছিলেন, জীবনানন্দ নেননি। নজরুলকে নকল করা বন্ধ করলেন বটে, কিন্তু ইয়েটস আর পো এসে জুটলেন।
ঝরা পালক বই হিসেবে খারাপ হতে পারেনি। ঝরা পালক একটা ভালো কবিতার বই ছিল। কিন্তু অন্য কিছুই তা ছিলনা। আন্তর্জাতিক পরিসরে, জীবনানন্দ দাশ সারা জীবনেও একটা অন্য কবিতা লিখতে পারেননি কারন নিজের খারাপ কবিতার প্রতি তিনি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন না, একটাও খারাপ কবিতা জীবনানন্দ ছাপেননি, খারাপ কবিতা ছাপার সাহস তাঁর ছিলনা
মায়া আর ব্রহ্ম, এই দুইয়ের ভেদে থাকা, বা এই দুইয়ের ভেদকে স্বীকার করা, এমনকি সেই ভেদ নিয়ে ভাবিত হওয়া একজন কবির কাজ নয়। বাউল হোন, বা গৃহস্থ, একজন কবি দ্বৈতাদ্বৈতবাদী। নাহলে তিনি সংসারী এক পোকা, নাহলে তিনি সর্বত্যাগী এক তপস্বীশংকরাচার্যকে মাথায় তোলা কবির পক্ষে সম্ভব নয়। আবার তাঁকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার প্রয়োজনও কবির নেই। বিবেকানন্দও যে কবিতা লিখেছেন, কালীকে নিয়ে লিখেছেন। অথচ তিনি ছিলেন বৈদান্তিক। শ্রী অরবিন্দ-র সাবিত্রী-র কথা ভাবা যাক। একজন কবি যেমন নাস্তিক হতে পারেন না, হ্যাঁ তিনি নাস্তিক হতেই পারেন না, একজন কবি তপস্বী হতেও পারেন না।
সেটা হলে রামকৃষ্ণের চেয়ে মহৎ কোনো কবি আমাদের ভাষায় থাকতেন কি?


অনুপম মুখোপাধ্যায়
            (
পরিচালক বাক্ )
           


বিনয় মজুমদার

বেজেছে তিনটে তবে

বেজেছে তিনটে তবে চা পানের বেলা
হয়েছে যেমতি হয় মরুভূমি মাঝে
জলতৃষ্ণা। আমি পুন্য নামধেয় এক
ব্যক্তিকে পাঠিয়েছি তো
                                    যেমতি সৈন্যকে
পাঠায় রণস্থলিতে। একটি সবুজ
গ্লাস হাতে পুন্য গিয়েছে বাহিরে
যেমতি দুর্গের থেকে বাহিরায় সেনা।
আমি কিন্তু বিছানায় বসে আছি একা
অক্ষর সাজাই আমি
                                    চোখের ভিতরে
ঢুকে যাবে পাঠকের চোখে ঢুকে যাবে
যথা পঞ্চশর ঢোকে মদনের ধনু
থেকে মনে কিম্বা তীব্র সূর্যালোক ঢোকে
সূর্য অভিমুখে কেউ
                                                            তাকালে তেমনি
আমার অক্ষরগুলি প্রচুর ঢুকেছে।




                                                            (ঋণ : কেশব মেট্যা ও মহুল)


দেবারতি মিত্র

যা নিয়ে কৌতুক

আমার সর্বস্ব ছুঁড়ে ফেলে দিই খোলা মাঠে
ওদের টিনের চালে, পশুর হৃদয়ে।
সেখানে জন্মায় রোদ, জ্যোৎস্না, অশ্রুর কল্পনা,
তারা সান্দ্র গান করে, ভয় দেখায়,
অপূর্বতা আনে।

মায়ের স্মৃতির রুক্ষ নিদারুণ শোক,
মৌচাকের ভরা মধু তাঁর স্নেহ কাঁপে।
আমাকে ডেকো না, বলে কাঠঠোকরা পাখি।
প্রজাপতি উড়ে যায় ফুল ফেলে দূর থেকে দূরে।

আমার থাকে না কিছু,
তিলে তিলে সব চলে যায়।
শুধু সন্ধ্যা-অরুণের অস্তরাঙা সজীব বেদনা
বয়ে আসে লোকালয়ে, দেশকালে,
ব্যর্থ কবিতায়,

যা নিয়ে কৌতুকভরে খেলা করো তুমি।


অরূপরতন ঘোষ

পুবদেশ থেকে . ৮৪ . একদিন পশ্চিমে

সূর্য ও কেন্দুর সমুদ্রে
আপ্রাণ নীল গেঞ্জি ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজের মতো
ভেসে আছে কিছুক্ষণ...

গতির ধারণাসমূহ, শূন্য বেগের হিসাব
অপর্যাপ্ত আলোয় আজ
দোনলা বন্দুক বলে ভুল হয়
ষাট ওয়াটের সতেজ চামড়ায় এসে লাগে
থালকোবাদের ধারালো ঘুঙুর, কোটরা হরিণের ডাক-

মাত্র এই বিকেলটি থম মেরে থাকে
সন্ধের জল ওঠে নিঃশব্দে
হলুদ একতলায়


বিশ্বরূপ দে সরকার

দুটি কবিতা


ম্যাজিক

ফিরে আসো ময়ূরের পাশে
ময়ূর মানে মেঘলা রঙের পা
ঘন, নীল, পেখমের একটানা রেওয়াজ

স্নায়ু জয়ী হলে
সারারাত জমিয়ে রাখি ফোঁটা
সারারাত ফুরিয়ে আসা কায়দা
ডিঙিয়ে
জ্বর হবে, ভাঙা ভাঙা আহ্লাদ আর নির্ঘুম
অকারণ পাতা নড়া অল্প অল্প গাছ
চাঁদ না ডাকলে শেষ অবধি ম্যাজিক হয়ে যাবে...



বয়স সংক্রান্ত

চুপচাপ কোনো অসুখের ক্রিয়াপদ নয়
সে আসলে নিরাময় বন্ধ থাকা রবিবার।

আছি শব্দটার প্রতি মনোযোগী নয়,
আসলে সে সম্পর্কের হালকা প্রকৃতি।

তাই সে রান্নাঘরের ভেতর শান্ত আরশোলা
চাহিদা নেই, ভান নেই,
সহাবস্থানের পাশে...

অনেক বেলা হলে
কথারা লোডশেডিং হয়ে যায়
টুকরো টুকরো সাবধান থাকে
নেক্সিটোর অনুরোধে চিন্তারা ভাসে
রিজেকশন ভেতরে জায়গা পায়না

এই গৌড়ের প্রার্থনা বাতাসে ফুললে
অসুখ ফুরিয়ে আসে
না পাওয়াগুলো থাকা হয়ে

হাঁকডাকের মধ্যে মিশে যায়।



অনুপম মুখোপাধ্যায়





আপন হতে : ১টি পুনরাধুনিক

মহাকোশ ফুটে আছে। অপর দেশের
এই দেশে বন্যা বান বয়। নদী হয়ে যায়
চুমুতে যে ঠোঁট লাগে। যোনিও তো লাগে
চিন্তার নরমে কিছু দাঁত জেগে ওঠে
এই দাঁত। মহাশয়। লোকপ্রিয় নয়
ভয়ের কিনারা থেকে। স্নান করি আমি
বাথটাব। ফাঁকা। সাদা। মহাজাগতিক
ভুলে যেতে। সখী গোওওওওওও চিবুক লাগে না
এ কেমন চোখে। তুমি। লেখা হলে পালকের প্রভু
শ্রমজীবী মানুষের হাড়ের ভিতরে পলক হারালে
দাঁতে দাঁত চেপে। শীত। কথা বলেছিল
চাপ। দাঁতে চাপ। কু-আশারআলো হয়ে গেল
বোতলে যে লেগে ছিল রক্তের আভাস
গ্লাস দেখে মনে হল ড্রাকুলার ঠোঁট
জোনাকির মতো নয়। অহং। অপেরা
হারানো থালায়। এই। বাসন পেতেছি
চাঁদ দেখে মনে হল। ওপরের আলো
ঢিল মেরে দেখি। কেন। ঢিসুম কী বলে
হাত মেরে দেখি। ক্যানোকনুই কী বলে
জোছনার ঘুসি লাগে বুকের ভিতরে
প্লিজ প্লিজ আর নয় অতটা দিও না
বাগান। ইশারা দ্যায়। ডাকনাম দ্যায়
হাতলের ঝড়জলবেকারিতে রুটি ফুঁসে ওঠে
রবিবার মিশে আছে গাড়ির আলোয়
ড্রাইভার। ড্রাইভারে। ঘসেছে। করেছে
ছুটি পেলে আজ খোলে। স্নান করে আসে
পাথরের রোদবেলা। তারিখের নাম। জাঙফিরৎ ফিরৎ
কাহিনির মতো নয়। বিবরণ সরীসৃপ নয়
কাছের চকিত বারান্দা। প্রিয়েচেয়ার সুদূর
চেহারা যতটা তুমি ঘুরিয়ে এনেছ
কবিতা। সময় থেকে প্রণালী খুলেছে
অগঠিত লেখা ১ লেখাগুলোবরফের চেয়ে
অপেক্ষা করেছে। মেধাআগুন চেয়েছে
এই যে অসাড় এক কবির জীবন
অফিসে ও স্কুলে অফিসে শুধু। ঘসে। ঘসে চলে
ঘুম ঘর থেকে উঠে দ্যাখে সকালের শেষ
ছোপ ফেলে ছাল ওই!!!!! বনে চলে গেল
ছোপ ছাল কে কুড়িয়ে নেবে। হালুম কে পাবে
প্রধানত অনুভূতি। বাকিটা বন্দুক
ঘেমে ওঠে। শক্ত হয়। লতাপাতা খুলে
জোয়ারের আগে যত জল খেয়ে নেয়
কবি তো। পেয়েছে তার হাড়িকাঠ। প্রিয়
মাথা রেখে ভেবে নিল রাজা হয়ে গেছে
রাজা নয়। রাজা নয়। রান্নাবীর হল
স্বাদে ও সুবাসে তার জয়জয় কার
ছায়া মেপে ফেলে দ্যায়। আলোর হাঁড়িতে
আনন্দের খুশিয়াল রব আসে। হ-হ-হ-হরিণ
ফায়ার করেছে গান। গানের দোকান
মাউসের কম চাপ। মন খুলে গেল
বনে বনে গালিবেই ফেটে গেল। মীনে করা গালিবের কাঠ
মিনারেলস্ হয়ে আছে। নিহতট্রিগার
জানালায় কাচ আছে। আরো চাই কাচ চাই
ক্যানো অ্যাতো কাচ হলে। জানালা হবে না



-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------



সংগ্রহ করুন অনুপমের নতুন কাব্যগ্রন্থটি। কলকাতার ধ্যানবিন্দুদে বুক স্টোরে পাবেন। একটু বেশি ডিসকাউন্টে পাবেন প্রকাশক 'কবিতীর্থ'-র ঠিকানায় (৬৫সীতারাম ঘোষ স্ট্রীটকলকাতা ৯)। আমাজনে পাবেন। লিংক হল http://www.amazon.in/Prokolpo-O-Sfotik-Anupam-Mukhopadhyay/dp/8193100409/ ব্যক্তিগতভাবে কিনতে হলে অনুপমের সঙ্গে ফেসবুকে যোগাযোগ করুন। প্রচ্ছদ প্রদোষ পাল। মূল্য ১০০ টাকা।




পলাশ দে

চশমা যা দেখতে পাচ্ছে না 

যুদ্ধবিমান কখনো লজেন্স খায়নি
চিবিয়ে চুষে এমন কী স্তন

শুক্রাণু ফেলতে ফেলতে পুরো আশমানটাই
জালবন্দি ...রিলিফ ক্যাম্প উঁচিয়ে থাকে

নীচে হস্তশিল্প। ক্যারাভান তফাতে যায়

যাও প্রদর্শিত যত একামহল যত
যুদ্ধ ফেরত আসছে কোনো চাকা ছাড়াই

একটা সাইকেল দাও। এসো কাঁপা আঙ্গুল

বাংলা ভাষার কাঁচা কবিতা দেখো


মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারবে, ড্রাইভারের


জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়

তুরগ

সাদা X কালো ঘর নিয়েই
চুপিসারে আড়াই-পা মাত
খাদের একদম ধারে এসে
আগুন্তুক দমকা হাওয়া ...
বয়ে নিয়ে গেছিল হ্রেষাধ্বনি
পাহাড় থেকে পাহাড়।
তবু
কেশরের দাবী পুরুষ সিংহের
একার হ
ল কবে?
দৌড় >> দৌড়
এক পেশে আধিপত্য শেষে
অশ্বমেধ
দৌড় >> দৌড়
চিৎকারে উল্লাসে মেতে
ডার্বি শ্যাম্পেন
লাগাম << উদ্দাম শ্বেদ << স্বাধীন আরণ্যক
সাদা X কালো ঘর নিয়েই
বিনিদ্র পেগাসস রাত।




ডোম

পিঠ দেখে ঠিক
ধনুকের কথা মনে পড়ে
ছিলাহীন
বাণহীন...
শূন্য তূণীর তার পাঁজর;
শুধু আগলে রেখেছে
এখনও
জন্মসূত্রে পাওয়া হৃৎপিণ্ড -
সচেতন বসন্ত
যাকে হৃদয় বলে চিনেছিল কোনওদিন ।
জ্বলন্ত পালকের ছাই উড়ে
নখের ডগায়
ওইটুকু স্মৃতি সব শেষে;
জলে ভিজে ক্রমে ধুয়ে যায়।
স্রোতের গভীরে রূপ, ভস্ম যৌবন
আহ্বানে বিজন দুপুর,
যেখানে
আধপোড়া কাঠও বিক্রী হয় রোজ।
প্রেতের মত, কীটের মত, জোনাকীর মত
আগুনের ফুলকি মেপে মেপে
খুঁজে পেলে?
খুঁজেছ যেভাবে অবশেষ...
শোক যাকে চেনে নাভিমূল।
ঝুঁকে পড়ে খুঁজতে খুঁজতে
শুধু একটা
বেঁকে যাওয়া পিঠ;
যাকে দেখে ঠিক
ধনুকের কথা মনে পড়ে।  



কাজল সেন

ঝুরোকবিতা সিরিজ

(১১)

নাচঘরে তুমি হারিয়েছিলে নাকছাবি চানঘরে আসমান
নিজস্ব আড়াল থেকে ডেকেছিল বোস বাড়ির বউ
যাচ্ছে তো যাচ্ছেই একটা ঘুরপাক খেয়ে 
কবে যে ফিরবে সে আটচালায়
এই যেমন তুমি আমার কেউ নও কখনও
সস্তা দরে বিকিয়ে যাচ্ছে শিমূলের চারা
বুঝলে একটা হেস্তনেস্ত হওয়া দরকার আজকেই
দম হারিয়ে কুকুরটা এখন কামড়াচ্ছে নিজেরই অন্ডকোষ


(১২)

আমার ছবি দেখে ছবিওয়ালা একটা ছবি এঁকেছিল
কোথায় যে গেল ঘরের তক্তাপোষ বিছানা বালিশ
সোমা নামে ডাকতে সে বলল নাম তার স্বৈরিনী
আজ বড় মন খারাপ নন্দনার ডুগি কেন বাজে না আর
সেই যে গোপন সুখের কথা তুমি বলেছিলে
তিন লাফ চার লাফ আমি ছিলাম দশ লাফের নাগালে
রাশি রাশি ফুল বাগানে বড় রাস্তা জুড়ে মঙ্গলাহাট
জলসাঘরের আলো ক্লান্ত হয় শীতের সন্ধ্যায়


(১৩)

এই তো সেই মেয়ে যার নামে সব পুতুল কেঁদেছিল
পাঁচমাথার মোড়ে ট্র্যাফিক জ্যাম মাঝরাতে
একটা টানা বৃষ্টির দিন হলুদের দিন হলুদ হলুদ
তবে কি আজ রমার পাকা দেখা হলো
কানাই কানাই বাবা কানাই আমার
তোমাকে আড়াল করে আমি না হয় প্রকাশ্য হলাম
উইক এন্ডে বেড়িয়ে এলাম লোনাভালা


(১৪)

আমার হাত না ধরে মোনালিসা বলল এবার কেটে পড়ো
বনমালী লেনে তখন দুরন্ত বাস মদালসা সর্বনাশ
পাত পেতে খাওয়া হয়নি বহুদিন কেন এত পাতার অভাব
একটা ঘুর্ণিঝড় কোমেন নেতাজী পল্লীর পাকাঘরে
রাত অনেক হলো সোনামনা চলো শুতে যাই
পর্দা ওড়ে বইয়ের পাতা ওড়ে
ঝিনুক খুঁজে খুঁজে পাওয়া গেল না একটাও মুক্তোর দানা
ভালো মেয়ের আখ্যান তার আবার ব্যাখ্যান
কোজাগরী পূর্ণিমায় তাহলে দেখা হবে আবার


(১৫)

বৃষ্টি এলো তুমি এলে পাড়া জুড়োলো
কথার মাঝে কথা হলো আড়ি হলো ভাব হলো
আমি ঘোড়ার ডিমের জন্য অপেক্ষায় ছিলাম চৌরাস্তায়
ঘোড়া আমাকে কথা দিয়েছিল সে ডিম পাড়বে সন্ধ্যায়
কমলিনী তুমি কি জানো তোমার বিরহে কাঁদে কত বাবুসোনা
যে চলে যায় সে চলেই যায় পড়ে থাকে পাকাকলা আলুসেদ্ধ পান্তাভাত





নীলাব্জ চক্রবর্তী

দর্শনের কুয়োর ভেতর পড়ে যাওয়া তোমাকে

আমার অনেকটা ভেতরে ঢুকে এই সময়টা যাচ্ছে... গ্যালারির জন্য ক্যাপটিভ অডিয়েন্সের জন্য সারাৎসার শুধু... ক্রয়ক্ষমতা নামের একটা সরু সরলরেখার ওপর মৃদু ও তৎসম হয়ে আসা এই যাতায়াত... কাট... ট্রলি... বিজ্ঞাপন খেতে খেতে দেখছে সারাদিন ধরে বৃষ্টির ওপর কাঁচের টুকরো ঝরে পড়ছে পরপর... দর্শনের কুয়োর ভেতর পড়ে যাওয়া তোমাকে দেখতে পাচ্ছি আসলে একটা সামাজিক ভোরের ভেতর ইস্তক... অনুবাদযোগ্যতায় দেখতে পাচ্ছি...

রঙ থেকে মুখ গড়িয়ে পড়ছে
মুখোশের ছেলে
খুলে রাখছে কমফর্ট জোন
ভান করছে
আর নেমে যাচ্ছে মাংসসভ্যতায়
কারও জানলায়
একটা শীতল দিন
পড়ে যাচ্ছে
রিক্সার পাদানি থেকে
টাওয়ার অবধি বিকেল হাঁটছে
এডিট করা বৃষ্টিতে
রবারের ফিকে রাস্তা
আমায় ফিরিয়ে দিচ্ছে না
ওই স্থিতিস্থাপক দিনের আদল
মুঠো মুঠো স্তনের পাথর
কনভেয়ার বেল্টের গায়ে জড়িয়ে যাওয়া
কবিতাভাবনা
কখনো কেউ পড়বে ভেবে

বানানো অনুভূতিগুলোর জন্য কষ্ট হচ্ছে এখন...



মেঘ অদিতি

ক্লান্তি

চেনা রোদে কিছু মিথের বিভ্রম
কতটা যৌনগন্ধা ঘাম যেন নেশা?
তেজস্ক্রিয়তার এই দিনে
আমার জলঘড়ি ডুবছে বিষাদে
বাড়তে বাড়তে হাত
হয়ে উঠছে ব্রথেলের ইতিহাস
ওদিকে শোকসভা
ওদিকে মৃদুহাসি
ফিসফিস- রামধনু শোক

৮৭৬০ ঘন্টার অপেক্ষা এবার
ল্যান্ডস্কেপে জমাট ক্লান্তি

তর্জনিতে
সন্ধে
নামছে
আজ
খালাসিটোলায়


গুঞ্জন

এবার গুঞ্জন তোলো নওল বাতাস
মৃদুস্বরে একবার টুং
ভেঙে ফেলা যাক পুরোনো থার্মোমিটার

গুল্মলতার মুখবন্ধে
কখনো লিখে যাব  জ্বরতপ্ত নিস্তব্ধতা
নিরুদ্দিষ্টের দিকে কুঁকড়ে থাকার দিনে

আপাতত নাভিপদ্মে এই বুঁদ হয়ে থাকা...



শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়

বালি ও অব্যবহার


মাথা নামাচ্ছি ছিঁড়ে আনছি সহজ পোশাক এই পিঁপড়ে দেখে ভয় পাওয়া কিশোরীর হাতে দিচ্ছি  লাল রেণু, যে দেশ বর্ষার নয় তার কাছে বালি ও অব্যবহার আমি শিখে রাখছি, এই চারিদিক থেকে ঘাসে ঢেকে যাওয়া যাতায়াতকে দেখা, চলে আসছি ছুটি, এই কথা না বলার দিন, ভাঙা বাক্যের ঘুণ কীভাবে জিভে জড়াচ্ছে? আমাকে নিয়ে ফেলছে এক ব্যবহৃত শব্দের মাঠে যার জলাশয় নেই, ফেরা নেই, চৈত্র শেষের গন্ধ শুধু আমাকেই ফেলে রাখছে একটা ফাঁপা কাঠের নালিশ করে, আমাকে কি জলেও খাবে না?


যেখানে আসছি আর বাড়ি নেই একটাও, তোর সঙ্গে বলা ভাঙা ভাষা পড়ে আছে পিঁপড়েহীন জঙ্গলের দিকে, একটা সব দিক থেকে ক্ষয়ে আসা দুপুরস্তম্ভ বেড়ে উঠছে, আমার পিছনের কোনও শহর নেই, সামনে স্পষ্টতা নেই শুধু স্টিলের চলনে একটা রোগা ভয়ের গায়ে আমার ছায়া জ্বলে যাচ্ছে...


শুধু এটুকুই বলতে চাইছি শরীর খারাপগুলোয় একা থাকতে শিখে গেলে আর কিছু বাকি থাকে না, এক আয়না ঘেরা পাড়া দিয়ে আমার যাতায়াতগুলো কিছুতেই বাড়ি ফিরবে না বলে সামনের দুপা শূন্যে  ছোঁড়ে, একটা লতানে ভয়, একটা ছায়া, যে শহর তোকে কখনই দেখাতে পারব না, যেভাবে আমার সামনেই বৃষ্টি সম্ভাবনাহীন বিকেলের গুঁড়ো হলুদ ভরিয়ে দিচ্ছে বুকশেলফ, আমার কল্পনা শক্তি কাজে লাগছে না আমি দাঁড়িয়ে থাকছি ভগ্ন, আমার কাদার দেহে ক্রমাগত ঠুকরে চলেছে অজস্র পিঁপড়ে তুই আসতে পারছিস না...


দেরি হয়ে গেছে না কি খুব?
অস্থি রঙের পথ দুদিকেই কামড় বসানো
চৈত্রের শুকনো নদী পাড় থেকে শুধু লাল পিঁপড়ে
এই ফাঁকা সপ্তাহ ঠাসা চলাচলে দলবদ্ধ আক্রমণে স্থির
কাল থেকে আর কোনও দিন বেঁচে থাকবে না 

বাড়ি ফেরার রাস্তাটা এক দীর্ঘ বিকেলের কাটা ডানা হয়ে পড়ে রইল



প্রশান্ত গুহ মজুমদার




কর্কট

চেয়ার সরিয়ে নিলেই হয়।
বাতাস পড়ে যাবে।
খিলখিল বা হাসবে অখিল
গড়িয়ে জলপাতা গড়িয়ে।
যাওয়ার কথা যেখানে ছিল।
ভালবাসা?
ল্যাপটপ ঘুরে ঘুরে সেই।
সেই।
ল্যাপটপ?
উঠে বসছে কোমড়ের নিচে
আজ অনাবশ্যক।
জল কই!
জল?
পিচুটি থেকে আবার স্মৃতি।
নুন লাগে না বড় আর।
সাদা বুলেটিন ফ্যাসফেসে।


ভিতরের দিকে

ভিতরের দিকে টানুন
এই নুন শব্দ পক্ষপাতিত্বের দিকে আমাকে
আমি, যে সারাক্ষন বুঁদ
রসের অন্তনির্হিত আনন্দে
খোলামেলা এবং বাহিরের দিকে না
কেবল অপেক্ষা ডাক আসবে
আর তাঁর হাতে কিছুটা ভিতর আর
এই সন্দীপন
কোলাহলের দূরে
জলের দূরে
অবমানবের কিছু নিকটেই


চেতাবনি

গর্তগুলো খুব চেনা নয়
মনে হয় গর্তই
বুঝতে পারি একটা কিছু ঘটছে
পতাকা নামিয়ে রাখি
আর ধুলোর মধ্যে ধুলো খুঁজি
অশ্লীলতা না হয়
ক্লিভেজের সাদা যেন বাধা হয়ে না দাঁড়ায়
ভয়ে ভয়ে একটা অঙ্ক করে যেতেই থাকি
যার শেষে ধারাপাতের শব্দ আর শূন্য
তোমাদের ভয় দেখাতে পারে অন্তত একবার



তুষ্টি ভট্টাচার্য



প্লেট

প্রথম কাপ প্লেট আঁকার আগে
পেন্সিল বুলিয়ে যাওয়া রেখা -
রেখা ক্রমশ স্থূল থেকে স্থূলতর
বোন চায়নার জেল্লা হারাচ্ছে দেখে
এক প্রতিবাদে পাতা ছিঁড়ে ফেলা
আবার নতুন কাপ, নতুন প্লেটে পেন্সিল বোলানো -

নতুন আঁকতে গিয়ে অসমান পরিধি জুড়ে
ইরেজার, ইরেজার... ঘষে ঘষে মুছে চল
পাতা ছিঁড়ে গিয়ে কাগজের বল হও
ছেঁড়া পাতা দিয়ে এরোপ্লেন ওড়ে নি কখনও

নতুন খাতা এলে আবার কাপ প্লেট 
ইরেজার আছে, আছে কালো হয়ে যাওয়া পাতা
কিছুটা নিটোল পরিধি জুড়ে ক্ষয়ে যাওয়া রেখা

খাতা শেষ হয়ে এলে নতুন কাপ প্লেট
নতুন আঁকার ক্লাসে নতুনের খোঁজে 



শরৎ আঁকার ক্লাসে

মেঘ আঁকতে গেলে
দুটো কুঁচকে যাওয়া গোল
নীলাকাশের মাঝে সাদা খাতার মেঘ

শরৎ আঁকার ক্লাসে
শিউলির বোঁটার হলুদ ধেবড়ে গেছে
সাদায় ছোপ ছোপ নীল, হলুদ
কাশের জঙ্গলে অপুদুর্গার দে ছুট
রেলগাড়ির কালো ধোঁয়া হুশহুশ
অপুর মুকুট কই?

কুকুরের জোড়লাগা কে এঁকেছে??