Monday, August 31, 2015
জিঙ্ক সিলেবল অথবা একটি সুইসাইড
নোট
‘বাহ!’ একটা বাঁক ঘুরতেই মনে হল এই কথা। কিন্তু এই
তারিফ ঢেকে গেল মেঘে। এক মুহূর্তে। সেও যেন একটাই শব্দকে রেখে গেল। ‘বাহ’। প্রকৃতি কতটা নির্মম তার অনুভব হচ্ছে প্রাণে। প্রকৃতি কতটা মোলায়েম তারও
অনুভব হচ্ছে প্রাণে। বাঁকের পর বাঁক এমনই, কয়েকশো বিস্ময় প্রতি মুহূর্ত দিয়ে গুন
করে কয়েক হাজার, কয়েক লাখ, কয়েক কোটি হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে এই সিকিম অরন্যপ্রদেশে...
পেছনে আর নীচে দেখা যাচ্ছে। সারি দেওয়া গাছ আর গাছের গায়ে গায়ে মেঘকুয়াশার
সর। আমি একাই
সেসব শুষে নিচ্ছি। মনে হল আমার ভেতর ডার্করুমে নেগেটিভ হচ্ছে এক একটা শব্দ,ছবি, এক
একটা কবিতা। ‘পাইন’ শব্দটা নিয়ে সকাল থেকে ভাবনা...কিভাবে
শব্দটাকে মেপেজুপে নেওয়া যায়? একটা গাছের নাম ছাড়া এই শব্দটায় আর কি আছে? মনে হল
কয়েকটা... উচ্চতা, নিঃশব্দ, মেঘ, কুয়াশা, জল অথবা শিশির পড়ার আওয়াজ। কিন্তু
কিছুতেই সেই অনুভবে পৌঁছতে পারছি না যা আমার ডার্করুমে নেগেটিভ হয়ে ঢুকছে। অথচ সেই
অনুভবের অনুসঙ্গ এই ‘পাইন’। হাঁটছি...
-জানেন এই জঙ্গলে চল্লিশ রকমের রডোডেনড্রন
পাওয়া যায়?
-তাই নাকি? তা আপনি কটা খুঁজে
পেলে এখন অব্দি?
-হমম তা দুরকম তো দেখেছি বটেই!
-কোথায়? ওপরে?
-হ্যাঁ! ওখানে একরকম আর এখানে তো
দেখতেই পাচ্ছেন!
অশেষ চট্টোপাধ্যায়। কাল দার্জিলিং
মেলে আলাপ। ফ্যামিলি ট্যুরে। নেমে আসছেন।
-গুড মর্নিং! ক্যামেরা নিয়ে
সাতসকালে গাছ তুলতে বেরিয়েছেন?
-না পাখি!
-তা কি কি তুললেন?
- তুলেছি অনেকগুলো, কিন্তু নাম
জানি না বুঝলেন, কিন্তু কি সব কালার...তবে একটা পাহাড়ি মুনিয়াকে চিনতে পারলাম।
আমাকে চিনতে পারেনি অবশ্য। হা হা হা।
-কি করে জানলেন? ওদের উইকিপিডিয়ার
খবর আপনি রাখেন?
-না তা অবশ্য...হা হা হা...
মেঘে চাপা পড়ে যায় কথপোকথন...চাপ
চাপ জলকণা এসে লাগে মুখে। কথা পরবর্তী আমার হাঁটার সঙ্গে সঙ্গে বেজে ওঠে ঝিঁঝিঁবন
আর পাইন। কিভাবে ঢুকব প্রথম লাইনটাতে ভাবতে ভাবতে আরও খানিকটা ‘বাহ’ বেজে ওঠে আরও কয়েকবার।
#
দুপুরে
এখনও বৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে। এখনও মানে দুপুরের দ্বিতীয় চরণে। রুমের দেওয়ালজোড়া বিশাল
কাচ জানালার পাশে বসে একা আর এই হুইস্কি আর এই...
সকাল থেকে আমার ইচ্ছে
একধরনের সাহস দিচ্ছে
উড়ে না যাই
ভালো এবং মন্দ যত
হয় না আমার মনোমত
ওসামু জাদাই
অস্তগামী সূর্য দূরে,
হৃদয় মরে হৃদয়পুরে
দেহরে ঠাই
ভেবেছিলেন শোপেনহাওয়ার
হৃদয় থেকে কিচ্ছু পাওয়ার
সময়ই নাই
সকাল থেকে তাইতো ইচ্ছে
এক ধরনের সাহস দিচ্ছে
উড়ে না যাই!
শক্তি চট্টোপাধ্যায়। কোথায় উড়ব,
কেমন করে সে প্রসঙ্গ ঘরে নেই। কাচ দেওয়ালের ওপারে। আমিও, মানে আমি লেখার জন্য
চুপটি করে বসে। একা। বৃষ্টি থামা অথবা না থামার জন্য অপেক্ষা করছি। ছোট্ট যে
হোটেলটাতে উঠেছি, তার থেকে ‘পাইনবনের’ গহন ছায়ারা ছড়িয়ে আছে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে।
একটা রাস্তা, দুটো সুমো, আর কয়েক টুকরো বাড়িঘর আমাকে আর ওই ‘পাইন’কে জুড়ে রেখেছে। তুমুল একটা পশলার পর,অথচ সন্ধ্যে নামার আগে খোলতাই মগজ...হঠাৎ
খেলে যায়...
অন্ধকার দিয়ে বানানো আলো
আর আলোর অন্ধকার মুখোমুখি।
স্বেচ্ছাচারী সিগন্যাল জেগে উঠবে
চৌরাস্তায়।
গল্পহীন মেধার বিদ্যুৎখোর
জিজ্ঞাসা
চিহ্নেরা
প্রনব
পালকে দিয়ে আমি আমার চতুর্থ পেগ শেষ করি।
#
-সেদিন
আপনাকে দেখলাম। অত ওপরে খাদের ধারে দাড়িয়েছিলেন। আপনি একা এসেছেন? এখানে এত
ডিপ্রেশন?
-কিসের ডিপ্রেশন? ভালই তো লাগছে।
-ওটাকে সুইসাইড পয়েন্ট বলে জানেন?
-না জানতাম না। জানলাম। তবে...
মুচকি হাসি।
-গাছ দেখতে গিয়েছিলাম দাদা!
-গাছ? কি গাছ?
-পাইন
- এই বর্ষায় পাইন?
-কেন?
- গাছের সমুদ্রে এসে এই একটি
গাছের কথা মনে হল কেন আপনার?
-গাছের সমুদ্র? ভাল বলেছেন। না
আসলে একটা লেখা লিখব। তার মধ্যে কোথাও ঢুকে আছে পাইন গাছ। সেই লেখাটাকে খুঁজছি।
- কি লিখবেন? আপনি কি কবি?
বাজলো
ঘণ্টা কিয়দ্দুরে ফিরে এলাম হৃদয়পুরে
ভেবেছিলাম আমার ছুটি হলো
বহুদিনের
পরবাসে উঠান ভরে পাথর ঘাসে
পাগল, দুয়ার খোলো।
আমি বিস্মিত হই। একজন পথচলতি
এভাবে কবিতা। পাইনের চিহ্নগুলো তার দিকে বাড়িয়ে দিই। আমরা আজ থেকে বন্ধু হলাম
কেমন?
-বিকেলে চলে আসুন ধাবাতে? আড্ডা
দেওয়া যাবে। গ্রিন ভ্যালী হোটেলের গায়ে?
-ওককে!
-আপনার নামটা?
-দেবদত্ত পাইন
-বাহ
একটা হাসি দুজনেই ভাগ করে নিই।
#
মাঝে মাঝে ফিরে আসে চৈত্রের
বাতাস...
জলঢাকা খুলে দ্যায় সবুজের সমূহ
বিস্তার;
যেন দিন মিশে যাচ্ছে, ঘণ্টা বাজে
শালের জঙ্গলে,
এখানে তোমার কাছে পাথুরে জলের
কথাকলি
সোনালী রবার গাছ, আর তার ডাকাডাকি
শুধু
পাহাড়ে পাথুরে ধ্বনি, কাছে দূরে
কাঠের আবাস...
কত রকম করে জঙ্গলকে কাছে পিঠে
পেয়ে চলেছি। নেড়ে চেড়ে তার গন্ধ নিচ্ছি। যেমন আজ ফার্স্ট পেগের আগে নীলাদ্রী
বাগচির এই কবিতা। যদি ধরাযাক এত পাইন যে যোগাড় হল, তার ঠিক উলটো পিঠে যদি আরও অনেক
চিহ্ন ফেলে রেখে থাকে জঙ্গল? শুধু গাছের চিহ্ন মানে তো পাইনও তো বটে? কোথায় যেন
একটা লাইন কুড়িয়ে পেয়েছিলাম সেটা মাথায় বাজল...
ওই শব্দ বাড়িয়ে দেওয়া রাতের
কাঠচেরাইয়ের নিঃশব্দতা
বাজছে মিছিমিছি
কোথায় গিয়ে থামতে চলেছে এই
অবগাহন। টের পাই...রাতে পাতায় শব্দ হয়, বৃষ্টি পড়ে, আবার পাহাড় আবার কয়েক মাইল
মেঘের মেধা। আশেপাশেই। তবু পরের দুটো লাইন জোড়া যায় না! যেন না জুড়ে থাকা যেন কি
অসম্ভব...
তোমার ভেতর থেকে কেউ নেই
উড়ে উড়ে বেসরকারি গাছ
এ জীবনে ফুরোবেনা সেইসব
শব্দবাক্সে তোলা সাহসের কয়েকটা
নাভি
#
মনে হয়
আরও অবশ, আরও তরুণ হয়ে পড়ছে আমার গা। আমার পাইন অরন্যপ্রদেশ। একে আর শুধু অরন্য
দিয়ে, জল আর পাতা দিয়ে, চিহ্ন দিয়ে লেখা যাবে না। সমস্ত চিহ্ন উপুর করে খুঁজি।
ভাঙ্গা, গোটা, অবাক, হতভম্ভ সব চিহ্নমাত্রা। তবু মনে শেষে এসে মনেহয়...
চোখের সমান খোলামেলা
বৃষ্টি, অনেকদিনের গ্রীনো
পাইনকে ‘গ্রীনো’ ছাড়া কিভাবেই বা ভালবাসতে পারতাম আমি। ওই যে আমার পজিটিভ সুপার পাওয়ার। যে
আমার কাছেই ঘুমোতে চায় বা আমিই ঋণী হয়ে রইলাম একটা সেই দূরত্বের দিকে একা। সেই
ছায়ার কাছে একা। সেই মিহি রোদের বাড়িতে একা। খাদ বেয়ে নিচে রাস্তাও নেমেছে, পাতা
পড়ে আছে, নিশ্চিত সবুজে, নিশ্চিত অসামান্যতায় গ্র্যাভিটি প্রস্তাব করছে একটা
পাহাড়ি গ্রাম, এক একটা আরও পাইন আরও পাতায়, আরও ডালে আরও পাখিতে ফিরে যাবার
আকূল...পেনের অনুচ্চ শব্দে লেখা হয়ে চলে সুইসাইড নোট...
ওই শব্দ বাড়িয়ে দেওয়া রাতের
কাঠচেরাইয়ের নিঃশব্দতা
বাজছে মিছিমিছি
তোমার ভেতর থেকে কেউ নেই
উড়ে উড়ে বেসরকারি গাছ
এ জীবনে ফুরোবেনা সেইসব
শব্দবাক্সে তোলা সাহসের কয়েকটা নাভি
আখরোট থেকে হাই খুঁজতে
ভোর অব্দি
মেরুন ঘুমন্ত তাক
গায়ে গায়ে পাহাড়ে, মাংসে
বিকল্প খেলা দেখাবে কাঁচি
চোখের সমান খোলামেলা
বৃষ্টি, অনেকদিনের গ্রীনো
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Harrah's Atlantic City Casino and Hotel - MapyRO
ReplyDeleteView maps, 여주 출장안마 reviews and information for Harrah's Atlantic City Casino and Hotel in Atlantic 서귀포 출장마사지 City, NJ. 영주 출장샵 Casino and Hotel - 김천 출장안마 Borgata Hotel Casino & Spa 충청북도 출장샵 and