Monday, August 31, 2015
কিম হায়সুন :
দক্ষিন কোরিয়ার
গুরুত্বপূর্ণ কবি কিম হায়সুন।১৯৫৫ সালে উলজিনে জন্মগ্রহণ করেন কিম। বর্তমানে সোলে
বসবাস করেন এবং সোল ইন্সটিট্যুট অফ দা আর্টস-এ ক্রিয়েটিভ রাইটিং এর অধ্যাপনা করেন।‘কিম-সু-ইয়ুং
লিটারেচার অ্যাওয়ার্ড’ এবং ‘ডায়সান লিটারেরি অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন
কিম হায়সুন।আশির দশক থেকে কবিতা লেখেন কিম।শরীরী অনুভব ও মৃত্যু এক
আশ্চর্য জাড্যতা নিয়ে ব্যবহৃত হয় কিমের কবিতায়। মৃত আর অ-মৃতের ভেদ রেখাটি বারবার
পাল্টে ফেলে তার অবস্থান। মাই ফাদারস স্কেয়ার ক্রো (১৯৮৪), দা হেল অফ এ সারটেন
স্টার (১৯৮৭),এ পুওর লাভ মেশিন (১৯৯৭),এ গ্লাস অফ রেড মিরর (২০০৪), সরোটুথপেস্ট
মিররক্রীম (২০১১)আই অ্যাম ও কে,আই অ্যাম পিগ (২০১৪) তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ ।
কিম হায়সুন এর কবিতা
ফটোগ্রাফ
-
তৃতীয় দিন
কেমন আছে তোমার ডল পুতুল?
কেমন আছে তোমার ডল পুতুলের শরীর?
পুতুলটার কানে কানে তুমিই তো বলতে, ‘একদম চুপ করে থাকবি!
এসব কথা জিন্দগিতে কাউকে বলবি না!’ আর উপড়ে ফেলতে ওর
চোখদুটো।
মজাই তো পেতে,তাই না বলো?
পুতুলটার চুলগুলোও কেটে দিয়েছিলে
‘মর, হারামজাদি কুত্তি’
আগুনে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলে পুতুলটাকে
আর ভুলে গিয়েছিলে নিজের অতীত।
যখন তুমি বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলে একাই থাকত তোমার পুতুল
তুমি বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলে আর নিজের জীবনে ফিরে এসেছিল তোমার পুতুল
তুমি বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলে আর বন্ধ জানালাটা খুলে ফেলেছিল তোমার পুতুল
তুমি বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলে আর তোমার পুতুলও বাইরে বেড়িয়ে এসেছিল
তুমি বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলে আর এতিম হয়ে যাওয়ার ভান করেছিল তোমার পুতুল
আসলে কোন কারনে লোকজনের সামনে খেতে পারত না পুতুলটা
আসলে তো পুতুলটা জ্যান্তই ছিল
শুধু ওর নিজের ফাঁপা শরীরে
ঠেসে ঢুকিয়ে নিয়েছিল তোমার আত্মাটাকে
তোমার ডল পুতুলটা এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াত
আর ওর কাটা হাতদুটো হাতের জায়গা থেকে খসে পড়ত
পা দুটো খুলে আসত পায়ের জায়গা থেকে,দেখে মনে হত
কেউ যেন ইচ্ছে করে খুলে রেখেছে পা’দুটো বিছানার ওপর!
তোমার ডল পুতুল ঘুরে বেড়াত
তোমার ডল পুতুল কথা বলত
চোখের ভেতর নিজে নিজেই খুলে ফেলত চোখদুটো
আর কাঁদতে কাঁদতে ঘাড়টাই খুলে
ফেলত।
তুমি মারা যাওয়ার পর ও সত্যিই জ্যান্ত হয়ে উঠেছিল!
যা হোক,তুমি আর কোনদিন ওকে দাঁড় করাতে পারবে না
তুমি আর কোনদিন হাঁটাতে পারবে না তোমার ডল পুতুলকে
আর কোনদিন হাসতেও বলতে পারবে না তোমার ডল পুতুলকে
তোমার পুতুলের সাথে আর কোন সম্পর্কই নেই তোমার!
তবুও তুমি লিখবে,
‘প্রিয় ডল,রাতে ঘুম পাড়ানোর জন্য তো এখনও কাউকে দরকার তোমার!’
আর লিখতে লিখতে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠবে।
গামলা
-চতুর্থ দিন
মাংস কাটার ডুমটার ওপর মাথা রেখে শুয়ে পড়
কেঁদো না, দুঃখ ছাড়া লেখালিখির জীবন হয় না
ছাড়ানো ছাল, নাড়িভুঁড়ি, আলাদা হয়ে যাওয়া মুণ্ডু,তেলের বুদবুদ
থ্যাবড়া একটি হাত থেকে ঝুলে আছে টেংরির গাঁটদুটো
নাহ, তোমার সময় এখনও হয়নি।
মাঝরাতের সূর্য
- পঞ্চম
দিন
ওরকম একটি জায়গা থেকেই চিঠিটা আসবে
যেখানে তুমি কোনদিন জবাব পাঠাতে পারবেনা
আসলে তুমি তো এখানেই রয়েছ
আসলে তুমি তো শুধু নিজেকে খুলে রেখে চলে গেছ
ঐ গর্তটা সবকিছু জানে,নীল আকাশের মত জ্বলজ্বলে
একটি চিঠি এসে একদিন হাজির হবে
মরে যাওয়ার পর সবকিছু খুব তাড়াতাড়ি বোঝা যায়
উজ্জল একটি চিঠি পৌঁছে যাবে তোমার কাছে
ঠিক যেমন তোমার জন্মের আগে
ভূতভবিষ্যৎহীন দীর্ঘ চিঠিগুলি আসত
আলোর একটি গাড়ি থেকে ভেসে আসা মৃদু ঘণ্টার আওয়াজ
একটি ইজের পরা মেয়ের হাসি
ঘুমহীন একটি রাত্রিকে চিরে দ্রুত চলে যাচ্ছে রাতের শেষ ট্রেন
অন্য একটি পৃথিবীর দিকে
যেখানে প্ল্যাটফর্মের ওপর সবগুলি ট্রেন জড়ো হয়
একসাথে জ্বলে ওঠে আর তোমাকে ভুলে যায়
কোত্থাও যেতে পারবে না তুমি!
তুমি তো হাঁটতেই পারো না!
তোমার ছোটবেলার বন্ধুরা সবাই পৌঁছে গেছে ওখানে
ঐ উজ্জল গর্তটার ভেতর থেকে একদিন ঐ চিঠিটা আসবে
যার উত্তর কোনদিন কালো কালি দিয়ে লেখা যাবে না
তোমার ছেলেমেয়েরা তোমার সামনে বুড়ো হয়ে যাবে
ঠিক যেখান থেকে তুমি চলে গিয়েছিলে
আর যেখানে ফিরেও আসতে চেয়েছিলে
খুব উজ্জল আলো দিয়ে লেখা একটি চিঠি একদিন আসবে
ঐ জায়গাটাতে অন্ধকার বলে কিছু নেই
দীর্ঘ একটি চিঠি আসবে ওখান থেকে
নতুন কেউ জন্মালে যেরকম আলো পৃথিবীতে নেমে আসে
ঠিক ওরকম একটি চিঠি
তুমি চলে যাওয়ার পর
-ষষ্ঠ দিন
তুমি চলে যাওয়ার পর, ‘যেওনা’আর‘যেওনা’
আর তুমি ফিরে আসতে চাইলেই সবার শুধু ভয়, ‘তুমি ফিরে এসো না!’
তুমি মারা যাওয়ার পর ওরা তোমার চোখদুটো বন্ধ করে দেবে
হাতদুটোকে বুকের ওপর জড়ো করে রাখবে
আর কাঁদতে কাঁদতে শুধু বলবে, ‘যেওনা, যেওনা’
অথচ তুমি যখন একটি বেড়ালের মত জানালায় উঠে আসবে আর
দরজাটা খুলতে বলবে তখন সবাই তোমাকে চলে যেতে বলবে।
একটি কাগজের পুতুল বাঁশের মাথায় টাঙ্গিয়ে রাখবে,বলবে ‘তুমি এসো না’
তোমার জামাকাপড়গুলো ছুঁড়ে ছুঁড়ে আগুনে ফেলে দেবে, ‘তুমি এসো না’
কারন, তোমার হাত পা নেই
ডানাও নেই তোমার
তবুও শুধু ভেসে বেড়াতে পারবে তুমি
কোথাও নামতে পারবে না!
লুকোনোর চেষ্টা করলেও সবাই তোমাকে দেখতে পাবে
আর ফাঁকা মগজ নিয়ে সবকিছু বুঝতেও পারবে তুমি
কোন শরীর ছাড়াই ঠাণ্ডা টের পাচ্ছ তুমি
আর তোমার নাইটগাউনটা এই ভোরবেলায়
খাটের নীচে লুকিয়ে একা একা কাঁদছে
তোমার কফিনের ওপর শিশির জমছে
আর তুমি কফিন ছেড়ে অনেকটা দূর চলে গেছ
চাঁদের বালিশের ওপর তোমার মাথার ছায়া
মেঘের চাদরের ওপর তোমার শরীরের ছায়া
তুমি চলে যাওয়ার পর, ‘যেওনা’ আর ‘যেওনা’
অথচ তুমি ফিরে আসতে চাইলেই শুধু ‘না,ফিরে এসো না!’
ভাষান্তর : শৌভিক দে সরকার
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment