Monday, August 31, 2015
নিবেদিতা ঘোষ মার্জিত
বই টা দর্শনের। কিন্তু পুরস্কার পাওয়া বই- আনন্দ পুরস্কার। অধ্যাপক অরিন্দম
চক্রবর্তীর "ভাত কাপড়ের ভাবনা এবং কয়েকটি আটপৌরে দার্শনিক প্রয়াস" ।রিভিউ
করার নিয়ম হোল কোনও কিছু ভালো ও খারাপ দুটো দিক পরিষ্কার ভাবে দেখানো। প্রথমেই বলি
ভালো দিকের পাল্লা টা একটু বেশি ভারী। আমার মতন হুজ্জতি প্রবণ মানুষের সাথে দর্শনের
শেষ দ্যাখা সেই ক্লাস ১২। নম্বর ভালো উঠবে বলে নিয়েছিলাম। তারপর কথামৃত ছাড়া আর শাস্ত্র
পড়িনি। পাতা উল্টোতেই –ম্যাজিক। আমার
মতো লঘু মস্তিষ্কের মানুষের কাছে ও অত্যন্ত কিংবা বলা যায় ঘোরতর আকর্ষণের কারণ হয়ে
উঠলো।সাধারণ যে জীবন তার সাথে মুহূর্তে সংযোগ ঘটিয়ে ফেলে বই টি।
অরিন্দম চক্রবর্তীর “দর্শন” সত্যি “দ্যাখা” ,হৃদয় দিয়ে ও
মস্তিষ্ক দিয়ে । যে প্রখর অর্থনৈতিক জীবন যাপন চলছে পৃথিবী ব্যাপী সেটা থেকে দূরে না
গিয়ে জীবনের যে অমূল্য ও বিশুদ্ধ দিক আছে তার ব্যাখ্যা করেছেন যত্ন নিয়ে।ভাত আর কাপড়ের
যে ভাবনায় সারাজীবন অতিবাহিত করতে হয় সেই জীবন কে নিয়ে লেখা। অতি সাধারণ যে নেতিবাচক
দোষ অথবা বদ-অভ্যাস সে গুলো কে নিয়ে অতি উৎকৃষ্ট আলোচনা। ঈর্ষা, লোভ, ভয়, বিষাদ, পরশ্রীকাতরতা,
প্রতিশোধ ,মোহ ইত্যাদি নিয়ে তিনি যে বিশ্লেষণ করেছেন... তা এককথায় অপূর্ব। মহাভারত
থেকে গান্ধীজী , কোট করেছেন... যারা বোদ্ধা তাঁরা হয়তো এতে মৌলিকতা র অভাব বলবেন, আমি
তা বলছি না। আমার মনে হয় এটা নিখুঁত প্রয়াস । কারণ অন্যের ভাবনা কে উপযুক্ত ভাবে ব্যাবহারে
করায় লেখা আরও দামী এবং প্রামাণিক হয়েছে।মানবিক দোষ গুলি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নানান
গল্প বলছেন যাতে “লোভ””প্রতিশোধ” ইত্যাদি দোষ
গুলো স্বচ্ছ ভাবে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। আবার আমাদের নিজেদের মধ্যে সেই দোষ গুলো কেউ
দেখতে পাচ্ছি। বিবেক তাড়িত বেশ কিছু বিষয়ে আমার বেশ কান্না পেল, আত্মহত্যা বিষয়ে ।“আত্মহত্যা” যে কোন ভাবেই
কেউ ইচ্ছা করে ভালোবেসে করে না।তিনি কাঞ্ছিপুরম শাড়ি তৈরি হওয়া নিয়ে মর্মান্তিক গল্পটি
উল্লেখ করে যেন সুখী সুখী ভাবে থাকা আমাদের এই জীবন যাপনের যোগ্যতা কে প্রশ্ন রেখেছেন।পড়তে
পড়তে একটু থামতে হয় ।আমরা ঠিক ? আমরা ভালো কি ? দামী পোশাক পড়ে কাকে দেখাচ্ছি?
“সত্য আচরণ” যা আধ্যাতিকতার
আকর বলা যায়। সেটার বাস্তব দিক নিয়ে তিনি কে দক্ষতায় বিশ্লেষণ করে যা নীরস নয়। উনি
সেই সত্য আচরণের বাস্তব প্রয়োগের অসুবিধা গুলি এতো সুন্দর ব্যাখ্যা করেছেন , এক কথায়
সকলের পড়ার মতন। মন আর মুখ এক করার বাস্তব প্রয়োগ সম্ভব নয়। তবু সেটার মধ্য পন্থা তে
দাঁড়াতে হবে। আধুনিক ভাষা য় বলা যায়... ব্যাপক...। আসলে মনে যায় থাকুক প্রয়োগ হবে অন্যের
হিতকারী। কথা বলে আমরা অনেক সময় অত্যন্ত নৃশংস আচরণ করি। বাক্য দিয়ে আঘাত যে আসলে নৃশংস
সেটা বুঝতে আমাদের পেটরোগা বাঙ্গালীর আরও পরিণত হতে হবে... “দিল্লি এখন ও
অনেক দূর”।উনি বাক্য দিয়ে
আঘাত কে নৃশংস শ্রেণী ভুক্ত করেছেন। এটা ঠিক তথা কথিত “দর্শন” কি? যেটা আমি
ক্লাস টুয়েলভ এ ছেড়ে এসেছিলাম। সেটা বড্ডও কাঠখোট্টা ঠিক জীবনের সাথে চলে না। বড্ডও
বেশি নিরাকার। প্রাচীন ভারতীয় দর্শন , বুদ্ধদেবের উপলব্ধি থেকে কয়েক দশকের হিপি কালচার,
... সব গুলি আধুনিক জীবনের পাশে কিভাবে এসে দাঁড়াচ্ছে... একটু অবাক হতে হয়। দর্শনের
একটা যুক্তি প্রমাণের দিক আছে। এখানে অধ্যাপক অরিন্দম চক্রবর্তীর সেই বিদগ্ধতাও দেখতে
পাওয়া যাচ্ছে। আমি যদিও যুক্তি প্রমাণের দিক টি বুঝতে গিয়ে একটু হোঁচট খেয়েছি।আসলে
সেটা বুঝতে গেলে আরও একটু মস্তিষ্ক চর্চা করার দরকার ছিল।বই টি একবার পড়ে অধিগত হবার
নয়। বই টি তে সব চেয়ে বড় ব্যক্তিগত ভাবে যেটা পেয়েছি সেটা হোল – আধুনিক জীবন
যাপন যখন আমার মনন কে গুলিয়ে দিয়ে বোঝায় যে , ত্যাগ করা একটা দুর্বলতা, প্রতিশোধ না
নেওয়া অন্যায় , সেখানে এক অভূত পূর্ব সবল ভাবে বইটি সেই অতি প্রাচীন অমূল্য মর্যাদা
বোধ কে জাগিয়ে দেয়। “আমি” হীন হওয়া তা কত জরুরী। কত তা ইতিবাচক।
ত্যাগ করলে আসলে মানুষ জিতে যায়। প্রতিশোধ প্রবণতা আসলে অকারণ শক্তিক্ষয়।
বই টিতে জানতে পারা যায় অধ্যাপক মশায়ের অতি সাধারণ ছোটবেলা। তাঁর বাবা
ও মায়ের জীবন দর্শন। এই “সাধারণ” জীবন টি আসলে একটি সরল অবয়ব যার
মাধ্যমে জীবনের সমস্যা গুলো কে জয় করা যায়।হ্যাঁ ,নিজের কবিতাও উনি দিয়েছেন বইটির শেষে
। গোটা বই তে বহু দামী কবিতা কঠিন বিষয়ের সাথে লগ্ন হয়ে আছে। একটু নিন্দে করতেই হবে...কবিতা
উনি ভালো লেখেন না। বই টির বাঁধাই, প্রচ্ছদ উভয় খুব সুন্দর।অনুষ্টুপ প্রকাশনীর বেস্ট
সেলার এই বই। এটাই ভালো লাগে দর্শনের একটি বই লোকে কিনে পড়ছে।সংগ্রহে রাখার মতো বই।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment