Monday, August 31, 2015
এ মাসের কবি – সেপ্টেম্বর ২০১৫ – চিত্তরঞ্জন হীরা
আশির দশকের কবি চিত্তরঞ্জন
হীরা-র জন্ম ১৪ই এপ্রিল ১৯৫৯। তাঁর কবিতার প্রথম বই ‘স্বতন্ত্র ঈশ্বর’ প্রকাশিত হয় ১৯৯০ সালে। এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে তাঁর
কবিতার আরও ছ’টি বই - যথাক্রমে ‘বাকনদী মায়াজল’, ‘অহল্যা পাথর জানে’, ‘ছায়া অক্ষরের ভাঙা ভায়োলিন’, ‘এসো ম্লান উদ্ধার ও আলো’, ‘নিশিপাল’ ও ‘ফুটনোটে সূর্যোদয়’। প্রবন্ধের দুটি বই আছে তাঁর – ‘নারী ধর্ম বোধ’ ও ‘কবিতার মনোভূমিতে’। এছাড়া দুটি বই সম্পাদনা করেছেন তিনি – ‘কবিতা বহতা নদী’ ও ‘এই ছড়ার বনে
সত্যজিত’।
চিত্তরঞ্জন হীরা ‘ভিন্নমুখ’ পত্রিকার সম্পাদনার সঙ্গে জড়িয়ে আছেন একদম প্রথম থেকে প্রায় ১৫ বছর যাবত।
আগে দীর্ঘদিন জড়িত ছিলেন ‘অতয়েব ভাবনা’ পত্রিকায়। বাংলা কবিতার ক্রমবিকাশ নিয়ে তিনি ধারাবাহিক
প্রবন্ধ লিখেছেন ‘দৌড়’ পত্রিকায় ২০০২ সাল থেকে টানা ১০ বছর ধরে।
কবি-আলোচক-প্রাবন্ধিক চিত্তরঞ্জন হীরা-র সদ্য লেখা ১০টি কবিতা এবার এই পাতায়...
চিত্তরঞ্জন হীরা-র কবিতা
ধরাগুলো
নিজেকেই কেমন ঝুরি নামাচ্ছি
পুরোনো গলায়
ফিরে ফিরে রোজ আরেকটু নামা যায়
প্রিয়দর্শিনী বাড়িটার এমন ফিরতি
কাল
ধরাগুলো আর ধরবেনা জেনেও নিচ্ছে
দূর ও ঘন বুড়োদের বাঁকা শিবতলা
একজনই খুচরো নেয় চিৎকার ভেঙে
কি বলবে কি
আর ফুরোতেই চায় না
বলা কওয়া শেষ সাথে সাত হাতে আট
চুপ যাচ্ছে রাতসারা সীমা কার দিকে
রিসিভার দীর্ঘ তুলছে একটানা
হাইফেন
আলাদা
দিচ্ছে থেকে নিচ্ছেদের চোখে চোখে
কাকে দিচ্ছে কাকে নিচ্ছের খোলা
পাল্লার হাওয়া
খুলছে তো খুলছেই
ওমলেটে
চাউমিনে
যখনই লম্বা করি বেথুয়াডহরি
কেউ এসে পড়ে লম্বা হয়
দলে দলে আসে না
ক্লাসে যারা খুব বেঁটে কোন দল শুধু তারা
লেগেছে বলে এখানেও সব বয়সের লাগবে
তেমন নয় ছোট
হাতা ছেঁড়া হেঁটে
অনেক বুক ভালোবাসা বসায়
আলগোছার পায়ে
বাউল পায় মৃত শহরের শীত পোশাকে।
বাহান্ন
দাড়িতে কমছে
কিছুটা কমায়
দাঁড়াচ্ছে
এভাবেও হয়
যার যা বিরাম
বেরিয়ে একটা ফুরসৎ পেতেই
আহান্ন
আহা
আহা!
মাথা পেতে একঘর তালঝাঁক
ফুটকাটা কলম স্বভাবে
করবীকে কয়েকটা টিপস দিই –
টিপে টিপে একান্ন চোখের মৌসম
পৃথিবীর যে পিঠে আমাদের রুলটানা
সেদিকে নয়
আরেকটা চমৎকার
চমকে আরও সরগরম যেদিকে
দেখা উশ্
খুব অবুঝ গোটা
একলা ভেঙে দুমিনিট
মাখবে বলে সঙ্গে দুকুচি লালচে
ঠিকঠাক লাগে
লাগে লাগোয়ার ফাঁকা লাইনগুলো
তন্ন তন্ন করে জিপসির তাঁবু
দুবিঘত রাসভারি সাইকেল
তোড়া
বাস্তব ও কল্পনা।
এতগুলো মেয়েঘণ্টা পেরিয়ে বিকেল
খুব ইচ্ছে হয় যারা উঠছে
তাদেরও ইচ্ছে পাক
হাড়বাজনায়।
অনির্বাণ – ৩
আমরা অপেক্ষা করছিলাম যে শব্দটির
জন্যে
তার এখন ভরা বৈশাখ
কখন কী হয়ে যায় ভেবে একটা ফায়ার
ক্যাম্প
চারপাশে যে যার বন্ধ দম খুলে
রাখছে
কে কোথায় নামবে কোথায় দাঁড়াবে
এসব নিয়েই হাত তোলার ছায়া করা।
দরজাটা লাগালেই পেরোনো বাইলেন
কতোটা পেরোচ্ছি সেটাই বাজছে
ওয়ানফোর্থ ক্রাউন ধবধবে মাঠের
সেলফোনে
বাজছে খিলখিল
সঙ্গে একটু সবুজ বিয়ানো পানবাহার।
এপিঠ ওপিঠ দেখাদের মন কখনও
পাচ্ছিনা
যখনই খুঁজছি বেরিয়ে পড়ছে
চিনচিনে মুখগুলো
কারও কারও সিম থেকে।
অনির্বাণ – ৪
মর্জির মাপ বড়ো করা হল।
কয়েকবার ফ্রিতে ঘষে
ভেতর থেকে ঘুরিয়ে এনে
লাগিয়ে দেওয়া হল উলঝন্ করে।
এবারও মনে লাগছে না।
এতটা লাফাচ্ছে
বারবার লেগে যায় উজ্জ্বল বুটিতে।
মাথা নোয়াচ্ছে বন্ধুতা
তবু কখনও একা হওয়া যায় না।
কেউ না কেউ এসে যায় ঈর্ষাদের চেনাজানা
কাছে পিঠের সন্দেহ থাকে
থেকে থেকে অনির্বাণ চড়তে থাকে
লটকানো সিঁড়িতে।
অনির্বাণ – ৫
খসে পড়ার আগে মাঝের সমুদ্র
কাছের হতে চাইল।
কাছাকাছির তিনতলা চারতলার রোয়াককে
যারা ঢেউ বলতে চায়
তাদের লুকোনো তরঙ্গে অনেক সানসেট।
অনেকের ভিক্টোরিও বাগান থেকে
ঝুরি ঝুরি বাদাম উড়ছে।
খুশিদের বাড়িতে এখন আর কেউ থাকে
না
যে যার মত এসে কলকা দেয়
ঘুরে ফিরে চলে যায় আবার
দুইঝিল হাসির ম্যুরাল ডুবিয়ে।
কিছুটা প্রয়োজন জেনে হাসগুলো
পাতালকে খুঁজছে।
অনির্বাণ – ৬
ভেজা ফুসফুসগুলো শিশু দেয় লাল
কার্পেটে।
বাইরে কান্নারা অপেক্ষা দিচ্ছে
দিতে দিতে নিজেদের ক্লান্ত হামা
একটু রাখি বলতে পারে
না।
বিষণ্ণ আমাদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে
রেখেছে
এই উলু সেই ঝুলু করে
এদিক ওদিক থেকে কিনে আনে হাওয়া।
চোখ গেল সমান মেখলায় কোনও কথা নেই
তবু কাছের দূরে কথারা ছবিসোনার
কাচ ভাঙছে।
শনশন করে গেলবার যে নতুন
এবারও আরেকটা জেগে বসা নতুনের
ঘুরঘুর এলো জানলায়।
অনির্বাণ – ৭
হাতসওয়া দূরত্বে দোল খায় রাত
বিরেত।
একগলা রেওয়াজ নিচ্ছে অনির্বাণ
শাশ্বতর
নিচ্ছে ভোর
নেপোলির টুথব্রাশ টিলা থেকে
বাজাচ্ছে
মাথাভর্তি সরগম।
আমি বুঝতে পারিনা একহাঁটু কাদায়
কতটা লাগাম
কতগুলো অবসাদ
বা আবছায়া জোগালে
বসবার ঘর আস্তাবল হবে!
টুপিটা খুলছেই না
টুপির পালকে ছোটদের আয়না
আয় আয় করে এক জিরেনের রোদ
উল্টে দেখে গোলাপের ঠোঁট করা
চেনাগুলো পাল্টে গেছে কীনা!
অনির্বাণ – ৮
রাস্তা এখন রাত শবনম গোল্লাছুট
বিলকিসের সঙ্গে
তো আমাদের কি হবে
গ্রামটা পায়ের আদরে থেকে যাবে
বেগমে আখতারের তোড়া জড়াবে
লতা করবে
আরও একটু খাড়া হয়ে দাঁড়াতেই
মনখারাপের অবতল
তলে তলে দেখছি ফুটুক না ফুটুক করে
একবার মল্হার আরেকবার শুনশান
দিচ্ছে
শুনে মনে হল জীবন ফুরোয়
আরেকটা ফুরিয়ে যাওয়া অফুরন্তের
জন্যে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
কবিতার স্বরনিক্ষেপ পাল্টে গেছে চিত্তরঞ্জনদার হাতে । শব্দব্যঞ্জনের এক নতুন ধারায় আমরা অবগাহন করি । কবিতার পথ কত বৈচিত্র্যপূর্ণ তা এই কবিকে না পড়লে বোঝা যায় না ।শব্দকল্পের ইমেজ এবং ক্রিয়ায় চৈতন্যের বিদগ্ধ কোনো সত্যি কবিতাগুলিতে প্রশ্রয় পায় ।
ReplyDeleteচিত্তরঞ্জন হীরা এমন একজন কবি যিনি নিজের কবিতাকে ভাঙচুর করেন , পরিবর্তন করেন গতিপথ। নতুনের জন্য মনের দরজা জানলা খোলা রাখেন। আমার পছন্দের কবি, পছন্দের মানুষ।
ReplyDelete