• কবিতা সুর্মা


    কবি কবিতা আর কবিতার কাজল-লতা জুড়ে যে আলো-অন্ধকার তার নিজস্ব পুনর্লিখন।


    সম্পাদনায় - উমাপদ কর
  • সাক্ষাৎকার


    এই বিভাগে পাবেন এক বা একাধিক কবির সাক্ষাৎকার। নিয়েছেন আরেক কবি, বা কবিতার মগ্ন পাঠক। বাঁধাগতের বাইরে কিছু কথাবার্তা, যা চিন্তাভাবনার দিগন্তকে ফুটো করে দিতে চায়।


    সম্পাদনায়ঃ মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়
  • গল্পনা


    গল্প নয়। গল্পের সংজ্ঞাকে প্রশ্ন করতে চায় এই বিভাগ। প্রতিটি সংখ্যায় আপনারা পাবেন এমন এক পাঠবস্তু, যা প্রচলিতকে থামিয়ে দেয়, এবং নতুনের পথ দেখিয়ে দেয়।


    সম্পাদনায়ঃ অর্ক চট্টোপাধ্যায়
  • হারানো কবিতাগুলো - রমিতের জানালায়


    আমাদের পাঠকরা এই বিভাগটির প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন বারবার। এক নিবিষ্ট খনকের মতো রমিত দে, বাংলা কবিতার বিস্মৃত ও অবহেলিত মণিমুক্তোগুলো ধারাবাহিকভাবে তুলে আনছেন, ও আমাদের গর্বিত করছেন।


    সম্পাদনায় - রমিত দে
  • কবিতা ভাষান


    ভাষা। সে কি কবিতার অন্তরায়, নাকি সহায়? ভাষান্তর। সে কি হয় কবিতার? কবিতা কি ভেসে যায় এক ভাষা থেকে আরেকে? জানতে হলে এই বিভাগটিতে আসতেই হবে আপনাকে।


    সম্পাদনায় - শৌভিক দে সরকার
  • অন্য ভাষার কবিতা


    আমরা বিশ্বাস করি, একটি ভাষার কবিতা সমৃদ্ধ হয় আরেক ভাষার কবিতায়। আমরা বিশ্বাস করি সৎ ও পরিশ্রমী অনুবাদ পারে আমাদের হীনমন্যতা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরটি সম্পর্কে সজাগ করে দিতে।


    সম্পাদনায় - অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়
  • এ মাসের কবি


    মাসের ব্যাপারটা অজুহাত মাত্র। তারিখ কোনো বিষয়ই নয় এই বিভাগে। আসলে আমরা আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালবাসার কবিকে নিজেদের মনোভাব জানাতে চাই। একটা সংখ্যায় আমরা একজনকে একটু সিংহাসনে বসাতে চাই। আশা করি, কেউ কিছু মনে করবেন না।


    সম্পাদনায় - নীলাব্জ চক্রবর্তী
  • পাঠম্যানিয়ার পেরিস্কোপ


    সমালোচনা সাহিত্য এখন স্তুতি আর নিন্দার আখড়ায় পর্যবসিত। গোষ্ঠীবদ্ধতার চরমতম রূপ সেখানে চোখে পড়ে। গ্রন্থসমালোচনার এই বিভাগটিতে আমরা একটু সততার আশ্বাস পেতে চাই, পেতে চাই খোলা হাওয়ার আমেজ।


    সম্পাদনায় - সব্যসাচী হাজরা
  • দৃশ্যত


    ছবি আর কবিতার ভেদ কি মুছে ফেলতে চান, পাঠক? কিন্তু কেন? ওরা তো আলাদা হয়েই বেশ আছে। কবি কিছু নিচ্ছেন ক্যানভাস থেকে, শিল্পী কিছু নিচ্ছেন অক্ষরমালা থেকে। চক্ষুকর্ণের এই বিনিময়, আহা, শাশ্বত হোক।


    সম্পাদনায় - অমিত বিশ্বাস

Monday, August 31, 2015

জুবিন ঘোষ

১) কবি হিসেবে তুমি বেশি পপুলার না সংগঠক হিসেবে?
২) খেপচুরিয়াসে এতো উপদেষ্টামণ্ডলী তাদের কাছ থেকে কি উপদেশ নাও?
৩) খেপচুরিয়াসের কবিতা নিয়ে স্পষ্ট কথা লেখায় তাতে নেগেটিভ মন্তব্য থাকায় আমাকে একটা চিঠি দেওয়া হয় পড়েছিলে? নেগেটিভ আলোচনা করা যাবে না?
৪) তোমার সাথে প্রথম দেখা কোন্নগরে। কালোবেড়াল ছিল এমন কোন কবিতা পড়েছিলে। ভুলও হতে পারি, অনেক দিন প্রায় সাত বছরের বেশি হতে চলল। এখন পেছনে তাকালে কি মনে হয় ওগুলো কবিতা ছিল?
৫) মনে হয় তোমাকে প্রচুর লোক তেল দিচ্ছে?
৬) খেপচুরিয়াস না করে শুধু যদি নিজের লেখালিখি করতে, ভালো না খারাপ হত?
৭)'আসলে বারমুডা ট্রাঙ্গেল নয় কবির মনই ভূ ব্রক্ষ্মাণ্ডের গভীরতম আনসলভড মিস্ট্রি'--ভাবসম্প্রসারণ কর। :)

৮) 'ভাবছি একদিন তোমাকে ঠিক চুমু খাব

                                  গান স্যালুটে 
ভাবছি একদিন তোমাকে ঠিক চুমু খাব সেন্সর বোর্ডের সামনে
তোমাকে চুমু খাব রগরগে মার্কা
চুমু খাব টোয়েন্টিথ সেঞ্চুরি ফক্স হলিউডি মুভির দৃশ্যে   
ভালোবাসা, তুমি কি ঠোঁটে ঠোঁট পেতে দাঁড়াবে না !
ছুঁয়ে থাকো কিংবা না থাকো আছ সেটাই তো অনন্ত থাকা।
কড়িকাঠে ঝুলিয়ে দেওয়া লেবু-লঙ্কার সুতোর মতো
সর্বনাশের পথে পথ চেয়ে বসে থাকাও শৈল্পিক আনন্দ।  
কেউ চলে যাবে ভাবলে ধকল বাড়ে, এর বেশি কিছু নয়।
পুরোনো গানের টানে তাঁত টানো, গ্রামের পর গ্রাম
মুখরিত খটাখট্‌ শব্দে হাড়ে হাড় জোড়া লাগে
জানো ? ধকল বাড়ে এইসব ভাবলে।
চলে তো যাবেই ; তাবলে কি চুমু খাব না ?  
যেভাবে শামুক সরে যায় দূরগামী জলের কিনারে,
পেছনে পড়ে থাকে স্নেহশীলা ভিজে দাগ
ভালো বাসতে বাসতে পার্কের যাবতীয় চেয়ার দখল রেখে 
চুম্বন সন্ন্যাসী হয়। নিকটে কপট হয়। 
সাধক হয় তার কাঠের বেঞ্চি, গোল বেদি, ঝোঁপের আড়াল।
পাহারার চোখ, পুলিশের চোখ, ছায়াময় মূর্তির পিকেট এড়িয়ে
যা যায় চুম্বনের দিকে তা কখনও ফেরে না।
কে তাদের বোঝাবে দেবলীনা, একমাত্র ভালোবাসলেই  
ঝোঁপের অভাব বোঝা যায় এ শহরে  !
চুম্বন তুমি কি ঠোঁটে ঠোঁট পেতে দাঁড়াবে না সমস্ত আইন অমান্য করে ?

কোনও অন্ধকারে নয়
ভাবছি একদিন তোমাকে ঠিক চুমু খাব সার্ক সম্মেলনে  
ভাবছি একদিন তোমাকে ঠিক চুমু খাব কোনও শহীদ কিংবা স্বাধীনতা দিবসে   
তোমাকে চুমু খাব সেই পুণ্য, পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়।'

তুমি টা কে?
৯) এই কবিতায় তোমার যা বক্তব্য সেটা কি এর আগে কেউ কোথাও বলে যায়নি? কথাগুলো কি খুবই সহজলভ্য কথাবার্তা নয়?
১০) লাইক ফেসবুক লাইক। এটা একটা কবিতা বিচারে কতটা ঠিক? তোমার প্রতিটা পোস্টেই তোমার প্রতিটা প্রোফাইল পিকচারে লাইক পড়ে ১০০ ২০০। তুমি একজন পপুলার মানুষ ফেসবুকে। লাইক দিয়ে কবিতা  বিচার করা কি সত্যি যায়?
১১) হোক চুম্বনের পর তুমি আবার কেন পোস্ট করলে কবিতাটা?
১২) একটা স্লোগান কখনো কি কবিতা হয়ে উঠতে পারে? একটা কবিতা কখন স্লোগান হয়ে ওঠে? 



প্রশ্ন-১ মৃগাঙ্ক - কবি হিসেবে তুমি বেশি পপুলার না সংগঠক হিসেবে?   

জুবিন ঘোষ আমরা বড় মেধাহীন জীবন কাটাচ্ছি মৃগাঙ্ক। তাই দু-কলম লিখেই সবাই ভাবছি কবি হয়ে গেছি, মধুসূদনের পঙ্‌ক্তিটা মনে আছে তোমার ? কে কবি ---কবে কে মোরে? ঘটকালি করিশুধুমাত্র শব্দের ঘটকালি করছি মৃগাঙ্ক, একটা শব্দের সঙ্গে আর একটা শব্দকে প্রণয়-পরিণয়ের বন্ধনে বেঁধে দেবার চেষ্টা করছি মাত্র। এই জন্যই হয়তো তুমি যে আমার নামের সঙ্গে কবি তকমাটা জুড়লে তাতে বেশ বিব্রত বোধ হচ্ছেস্বপ্ন দেখছি একদিন একটা দারুণ ঘর বসাতে পারব যাতে পরিণয়ের ঘোরটা থাকবে। যাকে আমরা ঠাট্টা করে একঘর হয়েছে বলি সেটাই যেন একঘোর হয়েছে-তে পরিণত করতে পারি। সেদিন যদি কিছু মানুষ কবি বলে, সেদিনও ফিসসিফিয়ে বলব কেউই একশ শতাংশ কবি নয়, কবি এত সহজে হয় না। যেমন সকলে চাদের মাটিতে পা রাখতে পারে না, ঠিক তেমনি। আমার প্রথম যে লেখাটা বেড়িয়েছিল সেটা ২০০০ সালে, মানে যে বছর Y2K পৃথিবীতে আছড়ে পড়েছে। তাও সেটা কবিতা ছিল না, একটা ছড়া ছিল। তারপর দীর্ঘদিনের খরা। মাঝে একটা দুটো লেখা। তারপর ২০০৩ এর শেষ দিক থেকে নিয়মিত। তাও সেটা সিরিয়াস চর্চা ছিল না। ২০০৪-০৫ সাল থেলে কবিতা লেখার প্রচেষ্টাটা আরও মনোযোগী হই। সেক্ষেত্রে ২০০৩ থেকেই যদি ধরি, আজ ২০১৫---এই ১২ বছরে আমি কি একটিও কবিতা লিখতে পেরেছি যে এত সহজে কবি তকমাটা আমায় দিয়ে দেবে ? হ্যাঁ, কিছু লেখা পাঠকদের ভালো লাগে, তারা জানায়, কখনও কখনও কিছু লেখার লাইন বা গোটা কবিতাটাই অনেকে মনে রাখে। এটা আমার কাছে বড় পাওনা। তবে সহজে কবি হয়ে যাব এমন অসার ভাবনায় বড় ভয় হয়, কবি হয়ে গেলেই বোধহয় আর লিখতে পারব না। লেখার কাজটা হৃদয় ও মন দিয়ে করি এটাই যা। তাতে দুয়েকটা লেখা কবিতার মতো দেখতে হয়। মানুষ ভালোবাসে সেই সব লেখা। আর সংগঠকের কথা বললে বলব, মানুষকে ভালবাসলে, তার সুবিধা অসুবিধা দেখলে মানুষও তোমাকে ভালোবাসবেই। কোনও অনুষ্ঠানে আমি গেলে তারা কিন্তু সংগঠক জুবিন ঘোষ এসেছে বলে না। কবিতা লেখার প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে IQ বেশি কাজ করে, সংগঠনের ক্ষেত্রে EQ. আমার মনে হয় দুটোই আমার স্ট্রং। তবে হ্যাঁ পপুলারিটিকে আমি ভালোবাসি। আমি চাই আমার আশে পাশের মানুষকে গর্বিত করতে। কারণ আমি চাঁদে যেতে পারব না, হকিংসের মতো আমায় কেউ বায়ুশূন্য স্থানে ওড়াবে না। আমার জন্য কেউ রেড কার্পেট বিছিয়ে রাখবে না। অগত্যা আমি কবিতা লেখার মতো সবুজ ঘাসগুলোই পায়ের তলায় বিছিয়ে নিয়েছি।


প্রশ্ন-২ মৃগাঙ্ক -  ক্ষেপচুরিয়াসে এতো উপদেষ্টামণ্ডলী তাদের কাছ থেকে কি উপদেশ নাও?

জুবিন ঘোষ অবশ্যই নিই। আমার সৌভাগ্য এই প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বরা তাঁদের এযাবৎ অভিজ্ঞতা আমাদের সামনে উপুর করে দেন সময়-অসময়। বহুরাত্রেও আমি যখন ঘুমিয়ে তখন তাদেরই মধ্যে কেউ কেউ ফোন করে জানিয়েছেন, জুবিন ক্ষেপচুরিয়াসে এটা ঘটেছে, একটু এসে দেখো। কখনও ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টে সাহায্য নিয়েছি, কখনও ডেভলেপমেন্টাল ইস্যুতে। তবে সবার থেকে সব সময় হয়তো উপদেশ দিন, বা কী করা যায় বলুন বলে হয়তো বিব্রত করা হয়নি, তবে বিখ্যাত ব্যক্তিত্বরা সঙ্গে আছেন, তারা দেখছেন, পড়ছেন। অগ্রজদের মাথার উপরে রাখাটা অনুজদের জন্য একটা দিশা তৈরি করা। তবে কবি ও কবিদের প্রধান উপদেষ্টা কিন্তু তাদের পাঠকেরা।


প্রশ্ন-৩ মৃগাঙ্ক -  খেপচুরিয়াসের কবিতা নিয়ে স্পষ্ট কথা লেখায় তাতে নেগেটিভ মন্তব্য থাকায় আমাকে একটা চিঠি দেওয়া হয় পড়েছিলে? নেগেটিভ আলোচনা করা যাবে না?

জুবিন ঘোষ মৃগাঙ্ক, তীব্র সমালোচনায় আমাদের কোনও দিনও আপত্তি নেই। এই ব্যাপারে আমাদের একটা স্পষ্ট রূপরেখা যে পাঠকের যে কোনও অভিমত আমাদের কাছে গ্রহণীয়। ক্ষেপচুরিয়াসে যারা আছেন তাদের প্রত্যেলকেই বলা হয়, পৃষ্ঠকুণ্ডলায়ন নয়, যথার্থ পাঠপ্রতিক্রিয়া পাওয়াটাই আমাদের লক্ষ্য। পিঠ-চাপড়ানি পেয়ে কেউ কবি হতে পারে না, কিছুটা বুদবুদের চেয়েও নাতিদীর্ঘ ক্ষণস্থায়ী সম্ভ্রম তৈরি হয়, প্রকৃত কবিতা তো ক্ষণস্থায়ী এফেক্ট নয়। প্রকৃত গঠনমূলক কাব্যসমালোচনা কাব্য ও কবি উভয়কেই সমৃদ্ধ করে। সমালোচনার ক্ষেত্রে আমরা রোনাল্ড বার্থেসের দ্য ডেথ অফ দ্য অথর আর্টিকেলের মতামত তথা তত্ত্বের সঙ্গে সমবিশ্বাসী। একজন কবির কবিতা লেখা হয়ে যাওয়ার পর সেটা আর তার নিজের থাকে না। আফটার রাইটিং আ পোয়েট ইজ ডেড। ঠিক তেমনি আমাদের সমস্ত কাজের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ক্ষেপচুরিয়াস পত্রিকা, গ্রুপ, ব্লক যে কোনও ক্ষেত্রেই কেউই সমালোচনার ঊর্দ্ধে নয়। বর্তমানেও স্পষ্ট মতামত দিও, ভবিষ্যতেও দিও। এখন পিঠ চাপড়ালেও কি কালের রাহুকেতুর হাত থেকে আমরা রক্ষা পাব ? এই বিষয়ে কবিগুরুর একটি কবিতাকে বরং তুলে ধরি, ৫ই জুন, ১৯৩৫ সালে চন্দননগরে বসে কবিগুরু লিখছেন, যা কিছু লেখে সেরা নাহি হয় সবি / তা নিয়ে লজ্জা না করুক কোনও কবি -- / প্রকৃতির কাজে কত হয় ভুলচুক; / কিন্তু হেয় যা শ্রেয়ের কোঠায় ফেলে / তারেও রক্ষা করিবার ভূতে পেলে / কালের সভায় কেমনে দেখাবে মুখ। হেয়কে আজ ভালো হয়েছে ভালো হয়েছে বললে সেটা সোনার পাথরবাটি হয়, কবিতা হয় না। প্রকৃত শ্রেষ্ঠত্ব একদিন আবিস্কৃত হয়েই যায়। খুঁড়ে খুঁড়ে মানুষ বার করে। কবিতার ক্ষেত্রে এটাই আমাদের সততা। কবিদের অন্যের সমালোচনা যেমন নিতে শিখতে হবে, তেমনি আত্মসমালোচনাটাও জরুরী।


প্রশ্ন-৪ মৃগাঙ্ক -  তোমার সাথে প্রথম দেখা কোন্নগরে। কালোবেড়াল ছিল এমন কোন কবিতা পড়েছিলে। ভুলও হতে পারি, অনেক দিন প্রায় সাত বছরের বেশি হতে চলল। এখন পেছনে তাকালে কি মনে হয় ওগুলো কবিতা ছিল?

জুবিন ঘোষ আচ্ছা, একটা কথা বলো, আমি তো এটা ভেবেই আশ্চর্য হলাম কবিতাটার নাম এখনও তোমার মনে আছে ! ওটা তোমার মনে থাকল কেন ! ওগুলো কবিতা ছিল কি ছিল না সেটা আপাতত বড় কথা নয়, কবিতাতার নাম তোমার মনে আছে সেটাই তো আমার কাছে বিরাট পুরস্কার মৃগাঙ্ক। এখন মনে হচ্ছে দীর্ঘ সাত বছর বাদে আক্ষরিক অর্থেই মনে হচ্ছে এতদিন পর আমি ওই লেখাটা লিখে তৃপ্তি পেয়েছি। অর্থাৎ কবিতার শিরনামটার পাঠক-আয়ু সাত বছর টিকে গেছে।  


প্রশ্ন-৫ মৃগাঙ্ক -  মনে হয় তোমাকে প্রচুর লোক তেল দিচ্ছে?  

জুবিন ঘোষ আমি হচ্ছি আবদুল্লাএকটা খালি পিপের মধ্যে বসে চল্লিশ চোর দেখছি, ভয় লাগে কেউ না গরম তেল ঢেলে দেয় ! কুঁড়ে ঘরে থাকি, কুপি জ্বালতে যতটুকু তেল লাগে সেইটুকুই নিই, বাকিটুকু ফেলে দিই। J তেল তো আমি খাই না, তাই দিয়ে মনের আলো জ্বালাই, অন্ধলারে খনন করি তো, কুপিটাই ভরষা। সর্বক্ষণই তো গাধার পিঠে চেপে চল্লিশটা চোর বলছে খুল যা সিম সিম ! আমার মর্জিনা শুধুই কবিতা। তেল আমি কেবল চল্লিশ চোরকে পুড়িয়ে মারার জন্য ব্যবহার করি। 

প্রশ্ন-৬ মৃগাঙ্ক -  ক্ষেপচুরিয়াস না করে শুধু যদি নিজের লেখালিখি করতে, ভালো না খারাপ হত?

জুবিন ঘোষ সেটাই বরং ভালো হত। ক্ষেপচুরিয়াস আমার ওপর একটা গন্ধমাদন পর্বতের মতো চেপে গেছে। এত মানুষের ভালোবাসা, প্রত্যাশা, বাউণ্ডুলেপণা আর খ্যাপামির জায়গা হয়ে দাড়িয়েছে যে আমিও তার মধ্যে মিশে গেছি। অনেকটা সময় এতে চলে যায় যে সময়টা আমি শুধু আমার লেখালিখি নিয়ে থাকতে পারতাম। তবে এখন খুব এনজয় করি। এত নতুন মানুষ পেয়েছি, ভালো সমালোচক পেয়েছি, নিজেও প্রতিদিন শিখছি, এটাই এখন আমার একমাত্র বিনোদন। আমি ক্ষেপচুরিয়াসের প্রত্যেকটা মানুষকে হাতের তালুর মতো চিনি, তাদের কবিতাকে চিনি, প্রতিটা কবিতা আমি পড়ি। ক্ষেপচুরিয়াস কোনও দল নয়, অপরাজিতা ফিরদৌস নামে একজন একসময় ক্ষেপচুরিয়াস সম্পর্কে বলেছিলেন, এটা কোনও দল নয়, দল অর্থে এটা দলমণ্ডল, ফুলের পাপড়ির মতো। ক্ষেপচুরিয়াস যেমন অনেককিছু আমার থেকে কেড়ে নিয়েছে তেমনি অনেক কিছু আমাকে দিয়েছে। ক্ষেপচুরিয়াস অনেক অকবিকে সরাসরি বর্জন করেছে যেমন তেমন অনেক কবিকে পরিচিতি দিয়েছে, অনেককে বাঁচার প্রেরণা দিয়েছে, চলতি দশকের অনেকেই ক্ষেপচুরিয়াসকে তাই ভালোবাসে। আজ আর ক্ষেপচুরিয়াস আমার তৈরি করা গ্রুপ না, আজ ক্ষেপচুরিয়াস আমাদের আশ্রয়। যে মানুষগুলো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাঁফিয়ে যাচ্ছে, তাদের বসার একটু জায়গা। আমিও সেখানে দিনের শেষে থিতু হই। ক্ষেপচুরিয়াস আমাকে প্রকৃত সমৃদ্ধ করেছে।


প্রশ্ন-৭ মৃগাঙ্ক -  'আসলে বারমুডা ট্রাঙ্গেল নয় কবির মনই ভূ-ব্রক্ষ্মাণ্ডের গভীরতম আনসলভড মিস্ট্রি'-ভাবসম্প্রসারণ কর। J      

জুবিন ঘোষ -  জানো মৃগাঙ্ক আগে আমি কবির আনকসসাস মাইন্ডকে সাপোর্ট করতাম না, বলতাম যে কবি সে তার কবিতার প্রতিটা শব্দের ব্যবহারকে হাতের তালুর মতো চিনবে, অর্থাৎ ঘোর থাকলেও ঘোরটার ব্যাখ্যা নিজের কাছে অন্তত স্পষ্ট হবে। খুব সাম্প্রতিক আমি আমার মত পালটিয়েছি। কবির আনকনসাস মাইন্ডেও যে শব্দগুলো কবিয়ায় আসে, তার নির্মাণশোইলী হয়তো তার হাতে থাকে কিন্তু ভাবনাগুলো আর কনসাস হয়ে ওঠে না। নিজের ঘোরকে কখনও কখনও নিজের কাছেই স্পষ্ট হয় না, আক্ষরিক অর্থেই সেটাই তার ও অন্যের কাছেও ভিন্ন ভিন্ন অর্থে প্রকাশ পেয়ে যায়। কবির মনকে সব সময় যুক্তিগ্রাহ্য অনুভূতিতে ধরা সম্ভব নয়। সে কখন কী ভাবনায় থাকে, কী ভাবনা থেকে কী পরিস্ফূটিত হল তাকে বীজগাণিতিক নিয়মে বার করতে গেলে সেই রবিঠাকুরের ভাষাতেই বলতে হয়, কবিরে পাবে না তাহার জীবন চরিতে। বার্ড আই ভিউতে যারা দেখেন তারা যুক্তি-তর্কের জুরিদার, বৈষয়িক ভাবনায় মিলিয়ে নেন আশেপাশে কী হচ্ছে। স্বভাব কী বলে জানো ? মানুষের স্বভাব হল চিরন্তন ঘটনার সঙ্গে তুলনা করাই মানুষের স্বভাব। সেই সেটি মিললো না অমনি মানুষটি অস্বাভাবিক সমাজ বর্হিভূত একটি জীবে পরিণত হয়ে যায়। কবি একটি লেখা হয়তো শুধুমাত্র নিজের জন্য্য লিখেছেন, কোনোভাবে সেটা প্রকাশিত হয়ে পাঠক মহলে এল। এখন পাঠক যদি বলে আমি এই কবিতাটা বুঝতে পারছি না, সেটা বুঝবে কি করে, একটা ব্যক্তিগত অনুভূতি যা কবি হয়তও পাঠক পড়বে ভেবেই লেখেনি। তার মনের অতলান্তে যে মেন্টাল স্টেটটা রয়েছে। কবির মনের দরজাগুলি কখন খুলে যাবে আর সেই দরজা দিয়ে আত্মগত গভীর সত্যগুলি প্রবেশ করে কবির সামনে বোধের এক নতুন রূপ প্রকাশ পাবে তা কবিও জানেন নাকবির মনকে জানা তাই খুব সহজ ব্যাপার নয়। এ এক মিস্ট্রি। নিজের কাছে এবং অন্যের কাছেও আনসলভড্‌ মিস্ট্রি। এই জন্যই একটা প্রবন্ধে কবি ও ঈশ্বরের সমান হয়ে যাওয়া ত্বত্ত্বের প্রসঙ্গে বলেছিলাম এটাই সেই কবির উন্মুক্ত অন্তর্দৃষ্টির তৃতীয় নয়নের কারসাজি। মানুষের দুট চখে একসঙ্গে চোখ রাখা যায়। চোখ দেখেই বুঝে নেওয়া যায় কী বলতে চাইছে। কিন্তু কবির যে তৃতীয় নয়ন থাকে। তিনটে চোখে একসঙ্গে কীকরে চোখ রাখবে?


প্রশ্ন-৮ মৃগাঙ্ক -  'ভাবছি একদিন তোমাকে ঠিক চুমু খাব

                                  গান স্যালুটে 
ভাবছি একদিন তোমাকে ঠিক চুমু খাব সেন্সর বোর্ডের সামনে
তোমাকে চুমু খাব রগরগে মার্কা
চুমু খাব টোয়েন্টিথ সেঞ্চুরি ফক্স হলিউডি মুভির দৃশ্যে   
ভালোবাসা, তুমি কি ঠোঁটে ঠোঁট পেতে দাঁড়াবে না !
ছুঁয়ে থাকো কিংবা না থাকো আছ সেটাই তো অনন্ত থাকা।
কড়িকাঠে ঝুলিয়ে দেওয়া লেবু-লঙ্কার সুতোর মতো
সর্বনাশের পথে পথ চেয়ে বসে থাকাও শৈল্পিক আনন্দ।  
কেউ চলে যাবে ভাবলে ধকল বাড়ে, এর বেশি কিছু নয়।
পুরোনো গানের টানে তাঁত টানো, গ্রামের পর গ্রাম
মুখরিত খটাখট্‌ শব্দে হাড়ে হাড় জোড়া লাগে
জানো ? ধকল বাড়ে এইসব ভাবলে।
চলে তো যাবেই ; তাবলে কি চুমু খাব না ?  
যেভাবে শামুক সরে যায় দূরগামী জলের কিনারে,
পেছনে পড়ে থাকে স্নেহশীলা ভিজে দাগ
ভালো বাসতে বাসতে পার্কের যাবতীয় চেয়ার দখল রেখে 
চুম্বন সন্ন্যাসী হয়। নিকটে কপট হয়। 
সাধক হয় তার কাঠের বেঞ্চি, গোল বেদি, ঝোঁপের আড়াল।
পাহারার চোখ, পুলিশের চোখ, ছায়াময় মূর্তির পিকেট এড়িয়ে
যা যায় চুম্বনের দিকে তা কখনও ফেরে না।
কে তাদের বোঝাবে দেবলীনা, একমাত্র ভালোবাসলেই  
ঝোঁপের অভাব বোঝা যায় এ শহরে  !
চুম্বন তুমি কি ঠোঁটে ঠোঁট পেতে দাঁড়াবে না সমস্ত আইন অমান্য করে ?

কোনও অন্ধকারে নয়
ভাবছি একদিন তোমাকে ঠিক চুমু খাব সার্ক সম্মেলনে  
ভাবছি একদিন তোমাকে ঠিক চুমু খাব কোনও শহীদ কিংবা স্বাধীনতা দিবসে   
তোমাকে চুমু খাব সেই পুণ্য, পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়।'


তুমি টা কে?

জুবিন ঘোষ ম্যানিয়া।   

তুমিটা হল অতিলৌকিক চেতনার মধ্যে থাকা একটা ম্যানিয়াআমাদের স্বপ্নের মধ্যে কখনও কিন্তু একটা তুমি থাকে না, অনেকগুলো তুমি একসঙ্গে থাকে, তুমি-এর বিবিধ রূপ, বিবিধ চরিত্রে যেন একটা তুমি অনেক তুমির সংমিশ্রণ। একটা গুটিপোকার মথ হতে চাওয়ার ইচ্ছে। তুমিটা বাস্তব-পরাবাস্তবের মাঝে দোদুল্যমান। কখনও স্বীকারোক্তি নয়, কখনও স্বীকারক্তির মতন।

প্রশ্ন-৯ মৃগাঙ্ক -  এই কবিতায় তোমার যা বক্তব্য সেটা কি এর আগে কেউ কোথাও বলে যায়নি? কথাগুলো কি খুবই সহজলভ্য কথাবার্তা নয়?

জুবিন ঘোষ তাহলে তো কবি শঙ্খ ঘোষের থেকে ধার করে বলতে হয়, এ কথা খুব সহজ কিন্তু কে না জানে / সহজ কথা ঠিক ততটা সহজ নয়। সহজের মধ্যেই অনেক গভীর কথা লুকিয়ে থাকে। তুমি বলতে পারবে, ভালো বাসতে বাসতে পার্কের যাবতীয় চেয়ার দখল রেখে  কীভাবে চুম্বন সন্ন্যাসী হয় ? আসলে এই কবিতাটা আমি হঠাৎ-ই লিখে ফেলে ডাইরেক্ট ফেসবুকে পোস্ট করেছিলাম। তার মাত্র কয়েকদিন পরেই যাদবপুরে ভিসি হটাও নিয়ে যে আন্দোলনটা হয়েছিল তাতে প্রকাশ্যে চুমু খেয়ে #হোকচুম্বন আন্দোলন হয়, আনন্দবাজারে একটা বিশাল ছবি বেরোয় ছাত্রছাত্রিরা প্রকাশ্যে যাদবপুরে চুমু খেয়ে অভিনিব প্রতিবাদ জানাচ্ছে। আমার কাছে দুই একটি ফোন আসে তারা জানায় আন্দোলনকারীদের মধ্যে কেউ কেউ এই কবিতাটা পাঠ করতে থাকে। ফেসবুকে পুনরায় যখন পোস্ট করি একষট্টিটা শেয়ার হয়েছিল। লাইক ছিল ৪০০ এর উপর।     https://www.facebook.com/photo.php?fbid=676442049137964&set=a.213536342095206.47785.100003165242324&type=1&permPage=1
আসলে কী জানো আমাদের আদি অনুভূতিগুলো প্রতিটাই কনস্ট্যান্ট। আমাদের খুঁজে নিতে হয় অনুভূতিগুলো প্রকাশের বিকল্প রূপ, একটা দর্শনের ভেতরে অনেকগুলো অণু-দর্শন লুকিয়ে থাকে। কবিকে সেটাই বার করে আনতে হয়। এটা অবশ্য আমি বিধান দিচ্ছি না, আমার মনে হয়েছে তাই বললাম। কবিতা যা কখনও জীবনের প্রতিফলন হয়ে দাঁড়াবে। একই কথা আমরা প্রত্যেকেই লিখে আসছি। কিন্তু তার মধ্যেও ভাবনা থাকে। তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা কবিতায়  ভয় নেই / আমি এমন ব্যবস্থা করবো যাতে সেনাবাহিনী / গোলাপের গুচ্ছ কাঁধে নিয়ে / মার্চপাস্ট করে চলে যাবে / এবং স্যালুট করবে / কেবল তোমাকে প্রিয়তমা এমন কথাও তো লিখে ফেলেছেন শহীদ কাদরী। এই কথাগুলোও কি সহজলোভ্য নয়। আসলে জীবনের প্রতিফলন যেটাতেই ঘটে থাকে সেটাই সহজলোভ্য, কারণ সেটা তো জীবন থেকেই আসে। আর জীবনের প্রতিফলন দেখতে পায় বলেই সেই কবিতা মানুষের কাছাকাছি চলে আসে। সহজ জিনিসকে কি আমরা সহজে দেখতে পারি? সেটাই কিন্তু আসল কঠিন কাজ। সহজের মধ্যেই অণু-দর্শনগুলো লুকিয়ে রয়েছে। কখনও কখনও গভীর অনুভূতিগুলির সঙ্গে সহজ অনুভুতিগুলিরও প্রয়োজন হয়। 


প্রশ্ন-১০ মৃগাঙ্ক -  লাইক ফেসবুক লাইক। এটা একটা কবিতা বিচারে কতটা ঠিক? তোমার প্রতিটা পোস্টেই তোমার প্রতিটা প্রোফাইল পিকচারে লাইক পড়ে ১০০ ২০০। তুমি একজন পপুলার মানুষ ফেসবুকে। লাইক দিয়ে কবিতা  বিচার করা কি সত্যি যায়?

জুবিন ঘোষ- পপুলার কি আর ১০০ বা ২০০ লাইকে বিচার করা যায়? শ্রীজাতের একেকটা পোস্টে ১৫০০ লাইক আসে। দ্যাট ইজ্‌ কলড্‌ পপুলার। হ্যাঁ যেটা বলতে পারো আমার একটা পোস্টে লাইক পাবার জন্য অন্যদের মতো লাইক বিনিময় করতে হয় না। যেটুকু আসে স্বতস্ফূর্তভাবেই আসে। আমি খুশি যে পাঠকরা আমায় পছন্দ করছেন। খুব সামান্য হলেও একটা পাঠক সমষ্টি আমায় প্রতিনিয়ত উৎসাহিত করে যান। তাদের জন্য লিখে আনন্দ পাই। ফেসবুকের মত ভার্জুচায়াল ওয়ার্ল্ডে কবিতার পাঠক বাড়ছে। যারা আমার কবিতার সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না তারা পরিচিত হচ্ছেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ ফিক্সড্‌ পাঠকে পরিণত হচ্ছেন। লাভের লাভ এটাই। এটা আমিও মানি ফেসবুক লাইক দিয়ে কবিতার বিচার হয় না, Scorecard never shows the Actual result. সেটা লাইক হোক বা নাম্বার। তবে মজা লাগে যখন দেখি কেউ কেউ তার প্রোফাইল পিক্সে লাইক বাড়াবার জন্য বারবার একই প্রোফাইল পিক্স ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আপলোড করে। এই ফেক হিরো সাজার সখ আমার নেই। হিরো তো আসল তারা নিভৃতে চর্চা করে যান। তবে আমার কবিতা মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে পড়েন শেয়ার করেন। এর জন্য ক্ষমতার শীর্ষে বসে মিটিমিটি হাসির দরকার পরে না আমার। আর আমার কাছে আজও যে মানুষটা বাড়িতে বসে বসে আমার কবিতার লাইন গুনগুনিয়ে বলে উঠছেন তার দাম অনেক বেশি। ফেসবুকে কেউ আমায় পছন্দ করল না করল তাতে কিচ্ছু আমার এসে যায় না। আমার নিজস্ব পাঠকগোষ্টি জানেন আমি কী লিখি না লিখিযেটা Deserve করি সেটাই আমি পাচ্ছি বলে মনে করি। যেটা Deserve করি না সেটা পাচ্ছি না। আমার ফান্ডা খুব সোজাসাপ্টা, শিল্প সচেতন থেকে মানুষের লিখে যাওয়া। ফেসবুকে লাইক অনেকটা স্কুলের প্রথম পিরিয়ডের টিচারের রোল কলে প্রেজেন্ট প্লিজ উত্তর দেবার মত। তারপরেও বাকি ক্লাসগুলো থাকে।


প্রশ্ন-১১ বাক্‌ ব্লগজিন -  হোক চুম্বনের পর তুমি আবার কেন পোস্ট করলে কবিতাটা?

জুবিন ঘোষ আমি চাই না দশর্ন শুধুমাত্র বোদ্ধা আর বুদ্ধিজীবীদের বৈঠকখানাতেই সীমাবদ্ধ থাকুক। আমি চাই মানুষ আমায় দেখুক, আমার কথা শুনুক। আমি কোনোদিনও শুধুমাত্র কবিদের কবি হয়ে না-ওঠা গোঁফে তা দিতে চাইনি। মানুষের কবি হতে চেয়েছি। মানুষই যদি না জানল, তাকেই যদি ছুঁতে না পারলাম তাহলে কীসের কবিতা লিখছি ভাই ! সাধারণ পাঠকদের জন্যও আমার কিছু কবিতা অন্তত থাকবে এবং শিল্পসন্মতভাবেই থাকবে। দর্শনকে তথাকথিত বোদ্ধাদের নিজস্ব সামগ্রী করে রাখার দিন ফুরিয়েছে। হোক চুম্বনের আগে যখন পোস্ট করেছিলাম, তখন সেই অর্থে কবিতাটা বেশি লোক দেখেনি। যারা দেখেছিল হয়তো তাদের মধ্যে কেউ কেউ হোক কলরবে বা হোক চুম্বনে ছিল। আমি তো সাধু-সন্ন্যাসী নই, ষড়রিপুর সাঁড়াশি থেকে নিজেকে বার করে আনতেও পারিনি। আমি কবিতা লেখার প্রচেষ্টা করি, সেটা সবাইকে পড়াতেও চাই। এটা আমার প্রথম কবিতা যা কোনও আন্দোলনে কাজে এসেছিল। জানি না কারা করেছিল, হয়তো একজন দুজন কিংবা হয়তো উপস্থিতদের মধ্যে সমষ্টিগতভাবে। আমি দেখেছিলাম হোক চুম্বনের থিম আর গান স্যালুট এর ওয়ে অফ কমিউনিকেটিভ ফিলজফি-টা একই। ভালবাসলে তাকে প্রকাশ্যে চুমু খাবার কথা ভাবতেই পারি। আমি মনুমেন্টের মাথায় মাথায় দাঁড়িয়ে আমার ভালোবাসাকে চুমু খেতে চাই। ইয়েস আই ওয়ান্ট আমি প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের টঙে চরে চুমু খেতে চাই। কোনও ন্যাকামোর আশ্রয় নিয়ে চুমু না, অন্যায় না, শালীনভাবেও আমি আমার ভালোবাসাকে উজার করতে পারি। আমার চুমু হবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদার মত প্লেটনিক পবিত্র। যারা দেখবার তারা দেখবে। যাদের জ্বলবার তারা জ্বলবে। হোক চুম্বনের হাওয়াতে এই কবিতাটা আরও মানুষের কাছে পৌঁছতে পারত। আমি ওই আন্দোলনকে সমর্থণ করি। দ্বিতীয়বার পোস্ট করাটা সেই সমর্থণের নিদর্শন। কোনও রাখঢাক নেই, পাশাপাশি আমি অবশ্যই চেয়েছিলাম এই কবিতার মাধ্যমে আমার মেসেজ আর অ্যাটিটিউডটা মানুষের কাছে পৌঁছে যাক।


প্রশ্ন-১২ মৃগাঙ্ক - একটা স্লোগান কখনো কি কবিতা হয়ে উঠতে পারে ? একটা কবিতা কখন স্লোগান হয়ে ওঠে ? 

জুবিন ঘোষ স্লোগান তখনই যখন সেটা কাব্য ব্যঞ্জনাহীন একটা মনোবাঞ্ছা ফুটে ওঠে। ইচ্ছাপূরণের দাবী। স্লোগানের মধ্যে কাব্যধর্মীতা থাকে না। দাবীর ভুমিকাটাই সরাসরি স্টেটমেন্ট হয়। যার মধ্যে কাব্যই নেই তা কীকরে কবিতা হয়ে উঠতে পারে ? অথচ সেই দাবীকেই যদি কাব্যিক উপস্থাপনায় গভীরতায় নিয়ে আসা হয় তখন সেটাই কবিতা হয়ে ওঠে। সুকান্ত যখন আঠারো বছর বয়স কবিতায় শেষ লাইনে লেখেন, এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে।। তা কবিতার চাইতে নির্মাণ কৌশলে স্লোগান বেশি হয়ে যায়। দেশলাই কাঠি কবিতায় লেখেন, আমরা বন্দী থাকব না তোমাদের পকেটে পকেটে, / আমরা বেরিয়ে পড়ব, আমরা ছড়িয়ে পড়ব / শহরে, গঞ্জে, গ্রামে করতে হবে, রাখতে হবে, ঘটুক এটাই তো স্লোগান। এখানে সুভাষ মুখোপাধ্যায় স্বীকার করে নিচ্ছেন যে দলীয় পার্টি লাইনের স্লোগান হলেও সুকান্তের আগে আর কেউ ওকথা ওভাবে বলেনি ভলেই পাঠক কান খাড়া করে তার কথা শুনেছে। বলবার উদ্দেশ্যটা যাঁদের মনের মত ছিল না, বলবার গুণে তাঁরাও না শুনে পারেন নি। এবার সেই সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের মে-দিবসের কবিতা-তে দেখব একটা স্লোগান কীভাবে কবিতা হয়ে উঠল। কী বলেছিলেন সুভাষ ? প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য / ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা, / চোখে আর স্বপ্নের নেই নীল মদ্য / কাঠফাটা রদ সেঁকে চামড়া। একটা শিরদাঁড়া ভেঙে যাওয়া জাতিকে টেনে তোলবার চেষ্টা। তাদেরকে সংগ্রামের পথে উদ্দীপ্ত করতে চেয়ে রাজনৈতিক এই কবিতা যা সত্যিই স্লোগানসর্বস্ব হয়ে যেতে পারত কিন্তু হল না লেখনীর গুণে, স্রেফ ব্যঞ্জনা ও উপমা-নির্মাণ উপস্থাপনার কৌশলে। প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য’—এখানে ফুল খেলবার দিন শব্দগুলি যেন তাকে স্লোগান ধর্মীতা থেকে কাব্য-ধর্মীতায় টেনে নিয়ে গেল। ৩য় লাইনে চোখে আর স্বপ্নের নেই নীল মদ্য স্বপ্নের নীল মদ্যনীল মদের মতো স্বপ্ন অথবা স্বপ্নের নেশাতুর ঘোর এই উপমা নীল মদের সঙ্গেযে লেখার প্রাথমিক আপাত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য স্লোগানের দিকে যেতে পারত তাকেই সুভাষ মুখোপাধ্যায় শব্দের পবিত্র গমনে কবিতার দিকেই নিয়ে গেলেন।   


*কবিজুবিন ঘোষ ও মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকারের ভাষা, ব্যাকরণ ও বানান অপরিবর্তিত রাখা হল।

              

My Blogger Tricks

5 comments:

  1. জুবিন, তোমার স্পষ্ট কথাবার্তা আমার খুব ভালো লাগলো । কবিতায় তথাকথিত প্রাগম্যাটিজমের আমদানি না করে আমাদের দীর্ণ সত্তাকে এক প্রগল্ভ জোশ এনে দিতে সক্ষম হয়েছ । সাক্ষাৎকারটি তোমার সময়কাল ও ভাবনাকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে ।তাকিয়ে থাকছি তোমার কথাগুলির দিকে । সার্ক সম্মেলনে চুমু খাওয়ার প্রসঙ্গটিতে যদিও আন্তর্জাতিকতাবাদের তত্ত্ব আছে তবু শুধু ওই প্রসঙ্গটি ভালো লাগেনি । ওখানে যারা থাকে তাদের দলের তুমি কেউ নও । তবু কবিতা তো ! বলাই যায় ।
    যা হোক সাক্ষাৎকারটি আংশিক ভাবেই থেকে গেল ।

    ReplyDelete
  2. স্পষ্ট কথা শুনতে খুব ভালো লাগে। খুব ভালো লাগলো।

    ReplyDelete
  3. মৃগাঙ্ক যে প্রশ্নগুলো এনেছে তার লোভেই পুরো সাক্ষাত পড়লাম। ওর চাঁচাছোলা প্রশ্ন ভাল লাগে, কাউকেই ছাড়ে না ব্যাটা। আর তোমার মানে জুবিন ঘোষের ডিফেন্স মারাত্মক স্ট্রং। মধুর ডিফেন্স আসলেই এড়িয়ে গেল আসল কথা।এত মিস্টি প্রত্যুত্তর আর বিশুদ্ধ লাগে না। জুবিন ঘোষের কিছু রেগেমেগে বলে ফেলা সত্যিটা,আশা করেছিলাম।এই যেমন, তেল সবাই ভালবাসে :) কি হবে এত সেজেগুজে। পোলাইট মেঘে ঢাকা অনেকাংশ আবছা আর কিছুটা পরিস্কার।এই দুয়ে মিলে চমৎকার হয়েছে। মৃগাঙ্ক এর প্রশ্ন ভালো লেগেছে।জুবিনদা আরো অভদ্র হতে পারতে। তোমার উত্তর চন্দননগরের লাইটিং মত সাজানো। বড় অপূর্ব লাইট দ্বারা সজ্জিত। মৃগাঙ্ক এর প্রশ্ন এই বর্ম ভেঙে ঢুকতে পারেনি, আর খুব বেশি ঢুকতে চায় বলে মনে হয়নি, তবে তুমি কাঁকড়া বেষ্টিত ঘাট এটা মানি

    ReplyDelete
  4. মৃগাঙ্ক যে প্রশ্নগুলো এনেছে তার লোভেই পুরো সাক্ষাত পড়লাম। ওর চাঁচাছোলা প্রশ্ন ভাল লাগে, কাউকেই ছাড়ে না ব্যাটা। আর তোমার মানে জুবিন ঘোষের ডিফেন্স মারাত্মক স্ট্রং। মধুর ডিফেন্স আসলেই এড়িয়ে গেল আসল কথা।এত মিস্টি প্রত্যুত্তর আর বিশুদ্ধ লাগে না। জুবিন ঘোষের কিছু রেগেমেগে বলে ফেলা সত্যিটা,আশা করেছিলাম।এই যেমন, তেল সবাই ভালবাসে :) কি হবে এত সেজেগুজে। পোলাইট মেঘে ঢাকা অনেকাংশ আবছা আর কিছুটা পরিস্কার।এই দুয়ে মিলে চমৎকার হয়েছে। মৃগাঙ্ক এর প্রশ্ন ভালো লেগেছে।জুবিনদা আরো অভদ্র হতে পারতে। তোমার উত্তর চন্দননগরের লাইটিং মত সাজানো। বড় অপূর্ব লাইট দ্বারা সজ্জিত। মৃগাঙ্ক এর প্রশ্ন এই বর্ম ভেঙে ঢুকতে পারেনি, আর খুব বেশি ঢুকতে চায় বলে মনে হয়নি, তবে তুমি কাঁকড়া বেষ্টিত ঘাট এটা মানি

    ReplyDelete
  5. মৃগাঙ্ক যে প্রশ্নগুলো এনেছে তার লোভেই পুরো সাক্ষাত পড়লাম। ওর চাঁচাছোলা প্রশ্ন ভাল লাগে, কাউকেই ছাড়ে না ব্যাটা। আর তোমার মানে জুবিন ঘোষের ডিফেন্স মারাত্মক স্ট্রং। মধুর ডিফেন্স আসলেই এড়িয়ে গেল আসল কথা।এত মিস্টি প্রত্যুত্তর আর বিশুদ্ধ লাগে না। জুবিন ঘোষের কিছু রেগেমেগে বলে ফেলা সত্যিটা,আশা করেছিলাম।এই যেমন, তেল সবাই ভালবাসে :) কি হবে এত সেজেগুজে। পোলাইট মেঘে ঢাকা অনেকাংশ আবছা আর কিছুটা পরিস্কার।এই দুয়ে মিলে চমৎকার হয়েছে। মৃগাঙ্ক এর প্রশ্ন ভালো লেগেছে।জুবিনদা আরো অভদ্র হতে পারতে। তোমার উত্তর চন্দননগরের লাইটিং মত সাজানো। বড় অপূর্ব লাইট দ্বারা সজ্জিত। মৃগাঙ্ক এর প্রশ্ন এই বর্ম ভেঙে ঢুকতে পারেনি, আর খুব বেশি ঢুকতে চায় বলে মনে হয়নি, তবে তুমি কাঁকড়া বেষ্টিত ঘাট এটা মানি

    ReplyDelete